Published : 20 Apr 2025, 12:19 AM
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।
শনিবার ঢাকায় দিনব্যাপী গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে কর্মসূচিটি শুরু হয়ে সন্ধ্যায় উত্তরাতে গিয়ে শেষ হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গণসংযোগ চলাকালে ছয়টি পথসভা হয়, যার মধ্যে প্রথম পথসভাটি হয় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেইট, মিরপুর-১০ ও উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে পথসভা হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আন্দোলনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হবে না৷ আমরা আশা প্রকাশ করি সরকার পাহাড়ের সমস্যাকে সমাধানের জন্য এবং জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ়করণে এই চুক্তি বাস্তবায়নের উপর জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"
সরকার এবং দেশবাসীকে এ বিষয়ে তাগাদা দিতেই দিনব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির-সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের মূল কাজটা হচ্ছে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন। আমার ধারণা এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করলে তারা ঐক্যমত্য পোষণ করবেন। এই ঐক্যমত্যের মাধ্যমেই এ চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যেগ নিতে হবে।
“অন্যদিকে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানেও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।"
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, "এই সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে এখনো কোনো সংলাপের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এটা জাতি ভালোভাবে নিচ্ছে না। এই সংলাপ অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে।
"রাষ্ট্র সংস্কারের যে কথা বলা হচ্ছে সেখানে আদিবাসীদের ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার সম্পূর্ণ হবে না। তাই সংলাপের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে এনে চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।"
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ বলেন, "পাহাড়ের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সমতলের বাঙালিদের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। আমরা আশা করেছিলাম স্বাধীনতার পর এসকল ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে৷ কিন্তু তা না করে তাদেরকে সংখ্যালঘু করার জন্য পাহাড়ের বাঙালি নিয়ে গিয়ে সেটলার হিসেবে স্থাপন করা হয় এবং আদিবাসীদেরকে নিপীড়নের মধ্যে রাখা হয়েছে।"
বর্তমান সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে এবং একটি রূপরেখা ঘোষণা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, "বাংলাদেশ কেবলমাত্র বাঙালির না। এদেশে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, সাওঁতালসহ বহু জাতির মানুষ বসবাস করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল যে চেতনা সেটা হল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আদিবাসীদের সাথে এ রাষ্ট্রের দূরত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। এ দূরত্ব ঘোচানোর জন্যই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা দরকার।"
কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দুই যুগ্ম সমন্বয়কারী মানবাধিকার কর্মী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
এছাড়া সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফন্ট, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।