সফরকালে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
Published : 21 Jun 2024, 08:37 PM
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার বিকাল ৩টা ২৯ মিনিটে তিনি নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান।
সেখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশন করা হয় লোকনৃত্য।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী তার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল তাজ প্যালেসে যান।
প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে সবশেষ নির্বাচনে জয়ী দুই সরকারপ্রধানের আগ্রহের মধ্যে এই সফর হচ্ছে।
শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান।
গত বুধবার তিনি বলেছিলেন, “অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। নব নির্বাচিত দুই দেশের দুই নতুন সরকারের মধ্যে দুই দেশের অমীমাংসিত যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”
টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা দিল্লি গেলেন। সফরের শেষ দিন শনিবার দুই প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসা শেখ হাসিনার এই মেয়াদে এটি ভারতে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। তবে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ৮ থেকে ১০ জুন তিনি প্রতিবেশী দেশটিতে সফর করেন। সে হিসেবে চলতি মাসে দ্বিতীয়বারের মত ভারত সফর করছেন শেখ হাসিনা। ওই সফরেও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সফরকালে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। সফর নিয়ে দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনেও আসবেন।
ভারতে শেখ হাসিনার শেষ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল ২০২২ সালে। ওই বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়, আলোচনা হয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে।
২০২৩ সালের ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা আবার ভারত যান জি টোয়েন্টি সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। এই সফরেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সই হয় তিনটি সমঝোতা স্মারক।
শেখ হাসিনা ও মোদীর শাসনামলে দুই দেশ ‘সম্পর্কের নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলে দুই পক্ষ থেকেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
এক দেশের ভেতর অন্য দেশের ছিটমহল বিনিময়ের পর দুই দেশের স্থল সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। অমীমাংসিত আরও অনেক সমস্যার সমাধানে দুই পক্ষ কাছাকাছি এসেছে।
তবে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা বন্ধের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি; তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আটকে যাওয়া চুক্তি সইয়েও অগ্রগতি হয়নি।
গত দেড় দশকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় প্রায় প্রতিটি আলোচনাতেই এ চুক্তি নিয়ে আশাবাদের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তা আটকেই আছে।
এবারের সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড পরিদর্শন করবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ ঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে সাক্ষর করবেন।
একই দিনে হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়েও বৈঠক হবে সেখানে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজেরও আয়োজন করা হবে।
সফরের শুরুর দিন শুক্রবার শেখ হাসিনার আবাসস্থলে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরদিন বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করবেন।
পরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি।
দু’দিনের সফর শেষে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার পথে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরনো খবর
সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দিল্লির পথে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত বাংলাদেশ