সফরকালে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ ও চুক্তি বিনিময় হবে।
Published : 21 Jun 2024, 02:32 PM
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর ২টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লির পথে রওনা হন।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে সবশেষ নির্বাচনে জয়ী দুই সরকারপ্রধানের আগ্রহের মধ্যে এই সফর হচ্ছে।
শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাইমুল ইসলাম খান।
“অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। নব নির্বাচিত দুই দেশের দুই নতুন সরকারের মধ্যে দুই দেশের অমীমাংসিত যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে,” গত বুধবার বলেছিলেন তিনি।
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সফরের শেষ দিন শনিবার দুই প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসা শেখ হাসিনার এই মেয়াদে এটি ভারতে প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফর। আর ভারতেও প্রধানমন্ত্রী পদে টানা তৃতীয়বারের মত শপথ নিয়েছেন মোদী।
এটি হবে চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় ভারত সফর। দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ৮ থেকে ১০ জুন প্রতিবেশী দেশটিতে যান শেখ হাসিনা।
দ্বিপক্ষীয় সফর না হলেও ওই সফরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, সফরকালে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ ও চুক্তি বিনিময় হবে। সফর নিয়ে দুই নেতার প্রেস বিবৃতি অনুষ্ঠান আয়োজনের সূচিও রয়েছে।
এর আগে শেখ হাসিনার শেষ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল ২০২২ সালে। ওই বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়, আলোচনা হয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার রোধ।
২০২৩ সালের ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা আবার ভারত যান জি টোয়েন্টি সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। এই সফরেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় তার। সই হয় তিনটি সমঝোতা স্মারক।
শেখ হাসিনা ও মোদীর শাসনামলে দুই দেশ ‘সম্পর্কের নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলে দুই পক্ষ থেকেই বার্তা এসেছে।
এক দেশের ভেতর অন্য দেশের ছিটমহল বিনিময়ের পর দুই দেশের স্থল সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। অমীমাংসিত আরও অনেক সমস্যার সমাধানে দুই পক্ষ কাছাকাছি এসেছে।
তবে আগের তুলনায় কমলেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যা শূনে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি; তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আটকে যাওয়া চুক্তি সইয়ে অগ্রগতি হয়নি।
গত দেড় দশকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় প্রায় প্রতিটি আলোচনাতেই এই চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছার আশাবাদের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তা আটকেই আছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত বাংলাদেশ
এবারের সফরের কর্মসূচির বিষয়ে প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ ঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে সাক্ষর করবেন।
একইদিনে হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনাও হবে সেখানে।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের কথা রয়েছে।
সফরের শুরুর দিন শুক্রবার শেখ হাসিনার আবাসস্থলে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরদিন বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করবেন।
পরে শেখ হাসিনা পুনরায় রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি।
দু’দিনের সফর শেষে শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার পথে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।