“প্রবারণা পূর্ণিমার মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশে হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি করতে পারে।”
Published : 23 Oct 2023, 03:41 PM
আগামী ২৮ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমার দিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ওইদিন রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, যা নিয়ে জনমনে রয়েছে উদ্বেগ।
বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সুমন কান্তি বড়ুয়া সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আগামী ২৮ অক্টোবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হবে। তিথি বা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রবারণা অনুষ্ঠিত হয় বিধায় এক বছর আগে থেকে এই উৎসবের দিন-তারিখ সরকারি-বেসরকারি পঞ্জিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
"প্রত্যাশা ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বিবেচনায় পূর্ণিমা তিথি রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত থাকবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ও অসাবধানতাবশত প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ঘোষিত একাধিক কর্মসূচি ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে।"
নির্বিঘ্নে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের সুযোগ করে দিতে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আহ্বান জানান সুমন কান্তি বড়ুয়া।
তিনি বলেন, "প্রবারণা পূর্ণিমা ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলাম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ সকল জাতি-গোষ্ঠীকে আকর্ষণ করে। ঐতিহ্যবাহী 'ফানুস উত্তোলন উৎস' হিসেবে পরিচিত সর্বজনীন উৎসবে অংশগ্রহণে তারা অধীর অপেক্ষায় আছেন। তাই প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশেষ মানবিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।"
সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে মহাসমাবেশ ডেকেছে, সেখান থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেদিন রাজধানী দখলে রাখার পাল্টা ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছেন, সেদিন ‘মহাসমাবেশ’ থেকে ‘সড়কে বসে পড়ার’ মত কোনো কর্মসূচি আসছে না। শান্তিপূর্ণভাবেই তারা কর্মসূচি পালন করবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেদিন ঢাকার রাজপথ আওয়ামী লীগেরই দখলে থাকবে।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি দিব্যেন্দু বিকাশ বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "প্রবারণা পূর্ণিমার মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশে হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অসংখ্য নারী পুরুষ ধর্ম পালনে বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই প্রবারণা পূর্ণিমা রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত রাখার অনুরোধ করছি।"
অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মমিত্র মহাথেরো, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বুদ্ধানন্দ মহাথেরো , সাবেক সভাপতি নেত্রসেন বড়ুয়া, ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু শ্রদ্ধানন্দ থেরো, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহ-সভাপতি রনজিৎ বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার অনুপম বড়ুয়া, বৌদ্ধ সমিতি ঢাকার সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী, যুবনেতা রাহুল বড়ুয়া, কল্লোল বড়ুয়া দোলন বড়ুয়া, শীলব্রত বড়ুয়া, প্রদীপ বড়ুয়া, প্রকৌশলী মিহির বড়ুয়া, সাংবাদিক নিপু বড়ুয়া, অমল বড়ুয়া ও নারী নেত্রী মধুমিতা বড়ুয়া চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।