এবার প্রতি ইভিএম কিনতে খরচ বাড়ছে লাখ টাকা

ডলারের চড়া দাম এতে ভূমিকা রাখছে বলে ইসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2022, 07:32 PM
Updated : 19 Sept 2022, 07:32 PM

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতিটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের দাম পড়বে ৩ লাখ টাকার মতো।

চার বছর আগে ইভিএম কেনার সময় প্রতিটির জন্য ব্যয় হয়েছিল দুই লাখ টাকার মতো; তার তুলনায় ব্যয় এবার ১ লাখ টাকা বাড়ছে।

ইভিএমের অনেক যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় বলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব এক্ষেত্রেও পড়ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৮৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে ইসি, যে অর্থের দুই-তৃতীয়াংশই ব্যয় হবে মেশিন কেনায়।

সোমবার ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম এর ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবটি (ডিপিপি) কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়।

এটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে যাবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। এরপর প্রকল্পটি যাবে একনেকে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। বর্তমানে ইসির কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করার সম্ভব। তাই নতুন ইভিএম কিনতে হচ্ছে ইসিকে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা হবে। এছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ, জনবল তৈরি ও প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যয় রাখা হয়েছে এখানে।

Also Read: ইভিএম কিনতে ইসির ৮৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত

প্রকল্প প্রস্তাবে দুই লাখ ইভিএমের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেখা যায়। সেই হিসাবে প্রতিটির জন্য ব্যয় ৩ লাখ টাকার বেশি হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদী ইভিএম সংক্রান্ত বর্তমান প্রকল্প ২০২৩ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সেবার দেড় লাখ ইভিএমে কেনা হয়।

সে সময় ইসির কারিগরি বিশেষ টিমের একজন সদস্য জানিয়েছিলেন, প্রতিটি ইভিএম কিনতে প্রায় ২৪০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। সে হিসাবে গড়ে প্রতিটি ইভিএমের দাম ১ লাখ ৯২ হাজার টাকার মতো পড়েছিল।

ডলারের দামের প্রভাব

ইসি পাঁচ বছর আগে যখন ইভিএম কিনেছিল, তখন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা তখনকার তুলনায় অন্তত ২০ টাকা বেশি। সেই কারণে এখন ইভিএমের কেনায় খরচ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, এবারও প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতিটি ইভিএমের দাম প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ২৪৮৭ ডলারের মতো, যা আগে কাছাকাছি। তবে বর্তমান ডলারের বিনিময় হার বিবেচনায় নিয়ে আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে প্রতিটি ইভিএমের খরচ পড়বে ৩ লাখ টাকার বেশি। এর বাইরে প্রতি ইউনিটের মূল্যের সাথে যুক্ত হতে পারে ভ্যাট-ট্যাক্স।

মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে ডলারের দর এখন চড়া। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর উঠানামা করছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে। আর যদি সরকারি কেনাকাটা হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ইভিএম কেনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করে, সেক্ষেত্রে এখন দর হবে ৯৬ টাকা।

Also Read: ইভিএমে কেন্দ্র প্রতি ব্যয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ নিয়ে ইভিএম তৈরি করা হয়।

ইভিএম সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ইভিএমের জন্য ব্যালট ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট, মনিটর, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, বিভিন্ন ধরনের কার্ড, ব্যাটারিসহ যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনতে হবে। এগুলো বিএমটিএফ জোড়া লাগায়।

“পার্টসগুলো বিদেশ থেকে আনতে হবে- ডলারের দাম যেহেতু বাড়তি, সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বাড়তেই পারে।”

এই প্রকল্পের বাকি অর্থ ব্যয় হবে ইভিএম সংরক্ষণে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এবং মাঠ পযায়ে পরিবহনে গাড়ির ব্যবস্থা করা।

সেক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য ইসির ১০টি আঞ্চলিক পযায়ে ১০টি ওয়্যারহাউজ নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণ করার ব্যয় ধরা হয়েছে।

এছাড়া অন্তত ১৩০০ জনবল নিয়োগ ও পাঁচ সহস্রাধিক দক্ষ লোকবল তৈরি; পরিবহন খাতে নতুন করে অন্তত ৪টি জিপ, উপজেলা ভিত্তিক অন্তত ৫৩৪ টি পিকআপ কেনার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ প্রকল্পে।

অধ্যাপক মাহফুজুল বলেন, “ইভিএমের মেইনটেনেন্সের দরকার রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে জুলাই-অগাস্টে কমিশনের কাছে ইভিএম তুলে দিতে পারলে তাহলে সমস্যা হবে না। ইভিএম হাতে পেয়ে এক দেড় মাস সময় থাকলে বা অক্টোবরের দিকেও যদি সব রেডি হয় তাহলেও চলবে।”

ভোটের বছর খানেক আগেই নতুন ইভিএম সংগ্রহের কাজ শেষ করতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সরকারের সায় পেলে ভোটের আগে সব কেনাকাটা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কাজ সম্ভব বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।