“ব্যাংকের ভেতরে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি, অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি।”
Published : 19 Dec 2024, 09:18 PM
কেরাণীগঞ্জে তিন ডাকাতের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে রূপালী ব্যাংকে সাড়ে তিন ঘণ্টার ‘জিম্মি সঙ্কটের’ অবসানের পর র্যাব জানিয়েছে, ব্যাংকের বাইরে ডাকাত দলের ‘আরও লোক’ ছিল।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, “ওরা তিনজন ভেতরে ছিল, বাইরে তাদের আরও লোক ছিল। ব্যাংকের ভেতরে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি, অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি।”
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় হানা দেয় একদল সশস্ত্র ডাকাত। তাতে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মী মিলে ১৬ জন ভেতরে জিম্মি দশায় পড়েন।
পরের সাড়ে তিন ঘণ্টা কাটে টান টান উত্তেজনায়। এমনকি ব্যাংকের ভেতরে অভিযানের প্রস্ততিও নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করে।
আলোচনার মাধ্যমে সংকটের অবসান হয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা খালিদুল বলেন, “ওরা ভেতরে ঢুকে ব্যাংক অফিসারদের জিম্মি করে ডাকাতির প্ল্যান করে। পরে ঢাকা জেলা পুলিশ, আমরা এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে এই জিম্মি অবস্থার অবসান ঘটাই। তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনটি দেশীয় পিস্তল হ্যান্ডওভার করেছে।”
তিনি জানান, ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্ট ভাংতে পারেনি। এর বাইরে ব্যাংকের কোনো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কি-না সেটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের চিফ সিকিউরিটি অফিসার শওকত তারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকাতরা ভয়-ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেছিল। তারা নিজেদের কাছে টাকা নিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।”
এর আগে র্যাব-১০ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বলেছিলেন, ব্যাংকে ঢুকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল তিন ডাকাত। পরে তারা তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের কেরাণীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
“ভেতরে ১৬ জন জিম্মি ছিলেন, তাদের মধ্যে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, আর বাকি ১২ জন গ্রাহক। প্রত্যেকেই অক্ষত রয়েছেন। বিনা রক্তপাতে তিন ডাকাতকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
ডাকাতদের আত্মসমর্পণের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথমে আমরা তাদের আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তাব দিই। নেগোসিয়েশনের এক পর্যায়ে তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণে রাজি হন। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে নিরাপদে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী, তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
ব্যাংক থেকে তিন ডাকাতকে নিয়ে যাওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে জিম্মিদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন।
বিকালে ডাকাত পড়ার খবর পেয়ে প্রথমে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ব্যাংকের গেইটে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে ব্যাংকের ওই শাখার চারপাশে অবস্থান নেয়।
ততক্ষণে সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। ব্যাংকের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যরা তাদের বার বার দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
পাশের একটি মসজিদের মাইক থেকে ডাকাত দলকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রয়োজনে যাতে ব্যাংকের ভেতরে অভিযান চালানো যায়, সেই প্রস্তুতিও নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে শেষ পর্যন্ত বিনা রক্তপাতেই সঙ্কটের অবসান হয়।