রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ নিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা-ইউএনডিপি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত।
Published : 10 Nov 2024, 10:03 PM
মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জের ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সরকার।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ ক্যাও সোয়ে মোয়ে-এর সঙ্গে এক বৈঠকে এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।
বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়ে তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশের দিকে মর্টার শেল চলে আসা এবং বাংলাদেশি নৌকা লক্ষ্য করে গুলির ঘটনার কথা তিনি বৈঠকে তুলেছেন।
“এসব ঘটনা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে; এটা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশি জেলেদের লক্ষ্য করে গুলির ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন জসীম উদ্দিন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় নানা সময়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রাতভর মর্টার শেল, বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে গত শনিবারও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সীমান্তে বসবাসকারীরা।
রোববার বিকালে নাফ নদীতে দুই দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি চরকে ঘিরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। নিকটবর্তী টেকনাফ স্থলবন্দরে থাকা শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেরা বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির গোলাগুলির মুখে পড়েছেন। জেলেদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার।
গত সপ্তাহে নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় নৌকাসহ মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত এনেছে বিজিবি।
ওই দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে চলতি বছরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আগে থাকা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে থাকার মধ্যে তাদের নতুন অনুপ্রবেশ বাংলাদেশে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিয়ানমারে, বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিকে ত্বরান্বিত করছে, তিনি তা তুলে ধরেছেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেপররাষ্ট্র সচিব সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ কর্মকাণ্ড ও সহিংস বিরোধ বেড়ে যাওয়া, মাদক ও মানবপাচার বৃদ্ধির কথা রাষ্ট্রদূতকে বলেন । তিনি বলেন, এসব ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, সে কথাও রাষ্ট্রদূতকে বলেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয, সংকট মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনের কথা স্বীকার করেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ ক্যাও সোয়ে মোয়ে।
রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ নিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা-ইউএনডিপি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশমুখী আরো জনস্রোত ঠেকাতে ওই উদ্বেগ মোকাবেলায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।