শিশুচত্বরের সিসিমপুর মঞ্চে ইকরি, হালুম, টুকটুকিরা না থাকায় শিশু সন্তানদের নিয়ে আসা অনেকে হতাশ হন।
Published : 07 Feb 2025, 11:10 PM
অমর একুশে বইমেলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যে ভিড় হবে তা প্রত্যাশিতই ছিল; সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও দর্শনার্থী, বইপ্রেমীদের ভিড় জমে মূলত বিকালে।
যদিও শুক্রবার মেলায় লেখক-সাহিত্যিকদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি, লিটলম্যাগ চত্বরে তাদের আড্ডাও চোখে পড়েনি। সেইসঙ্গে সিসিমপুরের ইকরি, হালুম, টুকটুকিরা না থাকায় জমে ওঠেনি শিশুচত্বর।
এদিন বেলা ১১টা থেকে মেলা শুরু হয়, দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এ সময়টিতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন মেলায়। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ছোটদের বই দেখেন। তবে শিশুচত্বরে এবার সিসিমপুর মঞ্চে এবার ইকরি, হালুম, টুকটুকিদের পরিবেশনা না থাকায় অনেকে হতাশ হন।
শিশুপ্রহর শেষে বেলা আরেকটু গড়াতেই ভিড় বাড়তে থাকে। হাজারো দর্শনার্থীর আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রকাশক, বিক্রেতারা।
ঝুমঝুমি প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক রিফা তামান্না ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম সপ্তাহে তো বইমেলা কিছুটা ঢিমেতালেই চলে। তবে এবার মেলার প্রথম শুক্রবার তো অনেক লোক এসেছে। সামনের দিনগুলোতে আরো জমবে বলে আশা করছি।”
অন্যপ্রকাশ, প্রথমা, কথাপ্রকাশ, অনন্যা, বাতিঘর, আগামী, ঐতিহ্যসহ ১০টির বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে বিক্রি নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনন্যা প্রকাশনীর মনিরুল হক বলেন, “শুক্রবার ছুটির দিনে ভিড় হওয়াটাই কাঙ্ক্ষিত। এবার প্রথম শুক্রবার ভিড় হয়েছে, বিক্রিও ভালো হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা সামনের দিনও থাকবে বলে আশা করি।”
বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের 'চায়না বুল স্টল' পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমও সেখানে ছিলেন।
স্টলটিতে চীন বিষয়ক বিভিন্ন বইয়ের প্রদর্শনীর পাশাপাশি দেখা যায় স্টলের সামনে চা শিল্প, সিংহ নাচ, ক্যালিগ্রাফি, অপেরা মাস্ক পেইন্টিং এবং পেপারকাটের মত ঐতিহ্যবাহী চীনা আচার প্রদর্শন।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ বলছে, এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৪টি।
সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
অমর একুশ উদযাপনের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সাত্তার প্রতিযোগিতা উদ্বোধন। এতে তিনটি শাখায় মোট ৭৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি শাখায় মোট ৪৩৩ জন অংশ নেন। বিচারক হিসেবে ছিলেন তারিক মনজুর, অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং বাচিকশিল্পী শফিকুর রহমান বাহার।
গান-কবিতা-আলোচনা
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুরশিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ অংশগ্রহণ করেন।
জুলাই গণআন্দোলনে নিহতদের স্মরণে 'জুলাইর গল্প মঞ্চে' কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
'লেখক বলছি' মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইকতিজা আহসান ও কবি মৃদুল মাহবুব। কবিতা আবৃত্তি করেন মোসা. ইসমত আরা এবং মুহাম্মদ ইসমাইল। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মাটির সুর সংগীত পরিষদ’ এর পরিবেশনার পাশাপাশি সংগীত পরিবেশনাও ছিল।
‘সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে শনিবার সকাল ১১টার পরিবর্তে বইমেলা শুরু হবে দুপুর ২টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শনিবার মেলায় থাকবে না শিশুপ্রহর।
অমর একুশ উদযাপনের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন হবে।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘স্মরণ: মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী।
আরও পড়ুন-