“পরে কবরস্থানে বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিন থাকবে, সেখানে সব তথ্য প্রদর্শন করা হবে,” বলেন মেয়র আতিক।
Published : 12 Aug 2023, 11:38 PM
এখন থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থানের তথ্য পাওয়া যাবে অনলাইনে; দাফনের আবেদনও করা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে। মৃত প্রিয়জনের কবরটির অবস্থানও জানা যাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
এজন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে গ্রেভইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট ডিএনসিসি (Graveyard Management DNCC) নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে গিয়েও অ্যাপের লিঙ্ক পাওয়া যাবে। সেখানে কবরস্থান সম্পর্কিত সব তথ্য জানা এবং আবেদন করা যাবে।
স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় শুরুতে এ সিটির ছয়টি কবরস্থানের তথ্য এবং সেবা অ্যাপটি ব্যবহার করে পাওয়া যাবে।
এগুলো হল- বনানী কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার কবরস্থান, উত্তরার ৪ ও ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান এবং উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান।
গত বৃহস্পতিবার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি তাদের আওতাধীন সব কবরস্থানে পর্যায়ক্রমে অ্যাপের মাধ্যমে সেবা চালু করার কথা জানিয়েছে।
শনিবার মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজকের তথ্য সুরক্ষিত রাখলে তা আরও অনেক বছর পরও জানা যাবে।
“একটি কবরস্থানে কত কবর আছে, কোথায় কবরের লোকেশন ছিল একটা জেনারেশন পরে আর কেউ কিন্তু এই তথ্য জানবে না। আমিও জানি না আজিমপুর কবরস্থানের কোথায় আমার দাদার কবরটি আছে। এজন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা তথ্য সংগ্রহে রাখলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে। কবর কোথায় ছিল এটা নিয়ে কেউ দিশেহারা আর হবে না।”
কাজটি করা মোটেও সহজ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “চ্যালেঞ্জ নিয়েও আমরা ম্যাপিং শুরু করেছি। পরবর্তীতে কবরস্থানে বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিন থাকবে, সেখানে কবরস্থানের সব তথ্য প্রদর্শন করা হবে।”
স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির এ কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আইসিডিডিআর’বি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে।
অ্যাপেই কবর খোঁজা-দাফনের আবেদন
ঢাকায় কারও স্বজনকে দাফন করতে চাইলে কবরস্থান খোঁজা, আবেদন, কবর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কবরস্থানের ফি দেওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। নতুন এ অ্যাপের (অ্যাপ্লিকেশন) ফলে এখন থেকে ঘরে বসেই এসব কাজ করা যাবে।
নতুন এ অ্যাপের সুবিধার বিষয়ে বলছিলেন কবরস্থানের তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজে যুক্ত আইসিডিডিআরবি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মোবাইল অ্যাপে বা ওয়েবসাইটে গিয়ে কবরস্থানের তালিকা, কবর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, নিয়মকানুন সবই দেখা যাবে। ফলে যে কেউ ঘরে বসেই এগুলো ফিলাপ করবেন। মোবাইলের মাধ্যমেই স্ক্যান করে ডকুমেন্টসগুলো আপলোড করে আবেদন সম্পন্ন করবেন।
“অন্যদিকে মোহরার অর্থাৎ কবরস্থানের ম্যানেজার তার ড্যাশবোর্ডে দেখে আবেদনটি অ্যাপ্রুভ করবেন। শুধু তাই নয়, কবরস্থানটি যদি কেউ স্থায়ী করতে চান সেটিও এখান থেকে করতে পারবেন।”
এহসানুর বলেন, নতুন এ পদ্ধতির ফলে নাগরিকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনও উপকৃত হবে।
“ব্যবস্থাপকের সুবিধা হচ্ছে তিনি দেখতে পারবেন তার কাছে কি কি আবেদন আছে। ডিএনসিসি জানতে পারবে কোন কবরস্থানের সবশেষ কী তথ্য আছে।”
তিনি জানান, দাফনের ফি অনলাইনে জমা দেওয়ার সুবিধা এখনও অনলাইনে যুক্ত করা হয়নি। এটার কাজ চলছে। এছাড়া কবরস্থানগুলো ডিজিটাল বোর্ড স্থাপনের কাজ চলছে।
“আমরা ফি’র বিষয়টি অটোমেশন করছি। সিটি করপোরেশনকে তাদের সিস্টেমের সঙ্গে মার্জ করতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, সিস্টেম তৈরি, ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে পুরো কাজটি ডিএনসিসির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
যা আছে নতুন অ্যাপে
ডিএনসিসি জানিয়েছে, Graveyard Management DNCC নামের এ অ্যাপে কবরস্থান সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কবরস্থানে যেসব ব্যক্তিকে এরইমধ্যে দাফন করা হয়েছে সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে। একজন সেবাগ্রহীতা কবরস্থানে না গিয়েও অ্যাপের মাধ্যমে লাশ দাফনের আবেদন করতে পারবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে দাফন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবেন। এতে কবরস্থানে নির্দিষ্ট কবর বাছাই করারও সুযোগ রয়েছে। দাফন শেষে একটি সনদ নেওয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে।
অ্যাপের আরেকটি অংশে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। অনেক আগেও যাদের কবর দেওয়া হয়েছে, তাদের কবরের অবস্থান, কার নামে কবর দেওয়া হয়েছিল, কবরস্থানের কোথায় ফাঁকা আছে, পুরাতন কোনো কবরের ওপর নতুন কবর দেওয়া হবে এসব তথ্য রয়েছে।
কীভাবে আবেদন
অ্যাপটি ডাউনলোডের পর মোবাইল ফোন নম্বর, ইংরেজিতে নাম, ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের করলেই ছয়টি কবরস্থানের তালিকা স্ক্রিনে আসবে।
এখান থেকে একটি কবরস্থান বাছাই করতে হবে। বাছাই করলে কবরস্থানটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত, মোট আয়তন, মোট কবর, সাধারণ ও সংরক্ষিত কবর এবং কত বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে, কতজন মানুষকে দাফন করা হয়েছে এবং আরও কতজন দাফন করা যাবে সেসব তথ্য জানা যাবে।
এ অংশে দাফনের জন্য কোন শ্রেণির কবরের কত ফি তা জানা যাবে।
এছাড়া কবরস্থানে লাশ দাফনের প্রক্রিয়া শেষ করতে কী কী করতে হবে সেই তথ্য, আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা এবং কবরস্থানের মোহরারের (ব্যবস্থাপক) মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে।
অ্যাপে ইতোমধ্যে দাফন করা ব্যক্তি এবং মৃত কাউকে দাফন করার জন্য আবেদনের জন্য আলাদা ঘর আছে।
আবেদনের ঘরে ক্লিক করলে একটি আবেদন ফর্ম আসবে। এখানে মৃত ব্যক্তির নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন নম্বর, লিঙ্গ, মারা যাওয়ার তারিখ, মৃত্যুর কারণ, স্থান ও সময়ের ঘর পূরণ করতে হবে।
এ অংশ পূরণের পর তা সংরক্ষণ করে পরের ধাপে যেতে হবে। সবগুলো ধাপ শেষ করার পর সিটি করপোরেশনের মোহরার দাফন করার অনুমতি দেবেন। এরপর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে দাফন করা যাবে।
শুরুতে ৬ কবরস্থান
এ সেবার আওতায় শুরুতে থাকছে বনানী, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী, রায়ের বাজার এবং উত্তরার ৪, ১২ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থান।
>> বনানী কবরস্থান স্থাপন করা হয়েছে ১৯৭৪ সালে। এর আয়তন ২৫ একর। ২৫ হাজার ৪২৮ জন মানুষকে দাফন করা হয়েছে এখানে, আরও ১৬৫০ জনকে দাফন করা যাবে।
>> মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের আয়তন ৫৬ একর। ১৯৮৩ সালে স্থাপিত এ কবরস্থানে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৬৩৯ জন মানুষকে দাফন করা হয়েছে। আরও ২৫ হাজার ৭৬৫ জনকে দাফন করা যাবে।
>> ২০১৬ সালে স্থাপিত রায়ের বাজার কবরস্থানের আয়তন ৯৬ দশমিক ২৩ একর। এখানে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮৮৫ জনকে দাফন করা হয়েছে। আরও ৫৪ হাজার ৩১১ জনকে দাফন করা যাবে।
>> উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান করা হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ২ দশমিক ৫ একর আয়তনের এ কবরস্থানে এ পর্যন্ত ৩২ জনকে দাফন করা হয়েছে। আরও ১০০ জনকে দাফন করা যাবে।
>> ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান। তিন একর আয়তনের এ কবরস্থানে এখন পর্যন্ত ২৩২৭ জনকে দাফন করা হয়েছে। আরও ৯৫০ জনকে দাফন করা যাবে।