“এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা। এটাকে আমরা লিগ্যাল বা কনস্টিটিউশনাল ইস্যু হিসেবে দেখছি না”, বলেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা।
Published : 24 Oct 2024, 08:20 PM
গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর এখন ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’তে থাকার মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ বিষয়ে সংবিধান মেনে চলতে হবে কি না, এই বিষয়টি নিয়ে সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডাকা ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছি আমরা। প্রচেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের। রাজনৈতিক দলগুলোকেই তাদের সিদ্ধান্ত এবং অবস্থান স্পষ্ট করে যারা ‘গণদাবি’ করছেন তাদেরকে জানাতে হবে।
“আমরা তো একটা ‘স্বাভাবিক’ পরিবেশে নেই, একটা ‘অস্বাভাবিক’ পরিবেশে আছি। এখন সব কিছু সংবিধান মেনে করতে হবে সেটা সম্ভব হবে কি না, এটা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।”
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কোথাও খুঁজে পাননি বলে একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগ বা অপসারণের যে দাবি উঠে, তার মধ্যে এই প্রথত বৈঠকে বসল উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেই বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় এই বিষয়টিই।
রাষ্ট্রপতির ‘মিথ্যা’ বক্তব্যে শপথ ভঙ্গ হয়েছে- এমন মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা তাকে অপসারণের যে বিধানের কথা সাংবাদিকদের বলেছেন, এরপর সেই বিধান নিয়েই শুরু হয় আলোচনা।
রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন বা অপসারণের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু সেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই পথ আর খোলা নেই।
আইনজীবীরা গত কয়েকদিনে জানিয়েছেন, ভেঙে দেওয়া সংসদ রাষ্ট্রপতি তখনই ফেরাতে পারেন, যখন দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। আবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও সুযোগ নেই, কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজেই এই ব্যাখ্যা চাইবেন, যখন আইনে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।
এই বিষয়গুলো সামনে আসার পর বঙ্গভবনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির পাশাপাশি মোতায়েন হয়েছে বাড়তি সেনা সদস্য, বসানো হয়েছে কয়েক ধাপের ব্যারিকেড।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন সেটা আমাদের নজরে আনা হয়েছে। তাঁর পদত্যাগে যে দাবি উঠেছে সেটাও বিবেচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দল যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে, সেটাও আলোচনা হয়েছে। আবার ওই দলের দুই-একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন সাংবিধানিক সংকট হবে না।’’
পদত্যাগ করা হলে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমি ঘোড়ার আগে গাড়িকে নিয়ে গেলে সমস্যা। এ মুহূর্তে কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবি নিয়ে আমরা কীভাবে ডিল করব।
আরও পড়ুন:
সাহাবুদ্দিনের বিদায় ঘণ্টা পেছাল?
“আমরা বলেছি এটি রাজনৈতিক বিষয়। যেহেতু দাবিটা জনগণ থেকে এসেছে, আমাদের সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এসেছে, কাজেই সংবিধানের প্রত্যেকটা বিষয় আক্ষরিক অর্থে মানা সম্ভব হবে কি না?”
রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেখানে সেখানে বাধাগুলো সহজ হয়ে যায় কিনা, তা নিয়েও কথা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা তাই এটির লিগ্যাল বা সাংবিধানিক ইস্যু হিসেবে দেখছি না। ’’
সিদ্ধান্ত নিতে কত সময় লাগবে- এই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এ সিদ্ধান্ত নিতে সময়টা আসলে এরকম করে বলা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নির্ভর করবে। তারা কোন অবস্থানে যাবে, তাদের সাথে আমাদের কী কথা হয়, তাদের আশঙ্কার জায়গা কোথায়, সে আশঙ্কাগুলো বাস্তবসম্মত কিনা।
“এটা খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা আছি তাও না; আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। কারণ, একটা পথে দীর্ঘদিন ধরে একটা অনিশ্চয়তা কেউ আশা করবে না। বিশেষ করে যেখানে ‘গণদাবি’ উঠছে সেখানে বিষয়টিতে বিলম্বিত করার হয়ত সুযোগ নেই। কতদিন এটা বলা যায় না।”
‘চাপ অস্বীকার করা যায় না’
রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সরকারের মধ্যে এটা চাপ হিসেবে নিয়েছেন কি না বা সরকারের মধ্যে অস্বস্তি আছে কিনা?- এই প্রশ্নে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকারের তো পুরোটাই চাপ। আপনি যদি চিন্তা করেন যে, আমাকে এখন বাজেট ম্যানেজ করা, আমাদের ইকোনমি রান করা, বহুমুখী আন্দোলন…
“কেউ এত বছর অনেকে ‘কথা বলতে পারেননি’, সব বিষয়ে আমাদের সবার কথা শুনতে হয়। কজেই সরকার পরিচালনার অনেকটাই চাপ-এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটাতে অস্বস্তিতে থাকার তো কিছু নেই।”
এর সমাধান হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সমাধানটা যেহেতু আমরা বলছি-ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছি। কাজেই এখানে অস্বস্তিতে ভোগার কিছু নেই।”
সংবিধান পুনর্লিখন হবে?
এ বিষয়ে প্রশ্নে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “দেশের ১৮ কোটি নাগরিক। তাদের অনেক রকমের মত থাকতে পারে। কেউ সংবিধানে খুশি হতে পারে, কেউ না হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। আবার কেউ নতুন সংবিধান বা কেউ সংশোধিত সংবিধান চাইতে পারে। এগুলোর দেখার আপাতত দায়িত্ব সংবিধান সংস্কার কমিশনের।
“রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ কেন্দ্র করে বলা হচ্ছে ‘সাংবিধানিক শূন্যতা’ এবং অন্যান্য বিষয়ে আসছে; বর্তমান সংবিধান থাকবে কিনা এটা নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে, একটি হচ্ছে ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সংবিধান পরিবর্তন করে নতুন করে লিখিত হবে। আবার অন্য দিক থেকে কেউ কেউ বলছে যে সংবিধান পুরোপুরি পরিবর্তন করা ঠিক হবে না।”
উপদেষ্টা পরিষদ এ বিষয়ে কী ভাবছে- এই প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, “আমি আমি আজকেও কমিশনের মিটিং এ ছিলাম। বিষয় হচ্ছে যে ব্যক্তিগতভাবে কে কী বলেছেন, কমিশন গঠনের আগে সেটা গ্রাহ্য হবে না বরং কমিশন স্বতন্ত্রভাবে সবগুলো স্টেক হোল্ডারের সাথে কথা বলে এবং সব রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে সবার সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।
“এটি ব্যক্তি মাহফুজ আলম অথবা আলী রীয়াজের মতের প্রতিফলন হবে না।… যখন কমিশনার নিয়মিত কার্যক্রম শেষ করে রিপোর্ট জমা দেবে, তখন আপনারা অবশ্যই দেখতে পাবেন।”