মঞ্জুরি কমিশনের এই প্রস্তাব আমলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
Published : 04 Mar 2025, 11:59 PM
ঢাকার সরকারি সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে; আর পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।
মঞ্জুরি কমিশনের এই প্রস্তাব আমলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখার যুগ্মসচিব শারমিনা নাসরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত কলেজে পরিচালনার বিষয়ে ইউজিসি থেকে একটি প্রস্তাব এসেছিলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মহোদয়কে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে গত রোববার চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাময়িক একটি কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে।
ইউজিসি যে কাঠামোর প্রস্তাব করেছে সে অনুযায়ী, ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাত কলেজের নজরদারি সংস্থা হিসাবে কাজ করবে। এর পরিচালক হবেন সাত কলেজের মধ্য থেকে নজরদারি সংস্থা মনোনীত একজন ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ অধ্যক্ষ।
প্রস্তাবিত কাঠামোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়তা করবেন।
একইভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবাতীয় কাজে ওই কাঠামোকে সহায়তা করবেন।
অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবেন। সাত কলেজে অনলাইনে ভর্তির জন্য একটি কমিটি থাকবে।
কাঠামোর কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো ‘উপযুক্ত’ কার্যালয় (যে কলেজ থেকে পরিচালক মনোনীত হবেন) থেকে পরিচালিত হবে; এই কাঠামোর অধীনে সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।
প্রস্তাবিত এ ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে জরুরিভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগ প্রস্তাবিত কাঠামোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে।
নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমে অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
এক সময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
২০১৪ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর ধারাবাহিতায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। কলেজগুলো হল ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ করার কথা জানানো হয় গত ২৭ জানুয়ারি।
তার আগেই গত ডিসেম্বরে সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ও ইউজিসির একজন সদস্য এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন।
ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই মঞ্জুরি কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি কাঠামো করার প্রস্তাব দেয়, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হল।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ ইতোমধ্যে বলেছেন, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।