“দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনা করে সিটি এলাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ির চলাচলে যে নিষেধ, সেটা আপাতত স্থগিত রেখে চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।"
Published : 20 May 2024, 04:06 PM
নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে দুই দিন বিক্ষোভের পর কেবল ঢাকা সিটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কথা বললেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন নীতিমালা নিয়ে আসছি, জীবিকা আগে না জীবন আগে। যদি ট্রাক ও বাসের সাথে ইজিবাইকের সংঘর্ষ হয়, তাহলে বাসের কারো কিছু হয় না। ১০ থেকে ১২ জন ইজিবাইকের ড্রাইভারসহ সব যাত্রী নিহত হন।
"এই অবস্থায় আমরা ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত যান বন্ধ করেছি। কিন্তু ঢাকা সিটিতে এই দুর্মূল্যের বাজারে নিম্ন আয়ের, স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের ও দুঃখের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন অন্যান্য সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কিন্তু ঢাকা সিটিতে এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞার দরকার নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনা করে সিটি এলাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ির চলাচলে যে নিষেধ, সেটা আপাতত স্থগিত রেখে চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন।"
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে কাদের বলেন, "বিআরটিএকে আমি বলেছি, এদের প্রতিনিধিদের কে ডাকবেন, কথা বলবেন। ড্রাইভারদের ট্রেনিং, গাড়ির সাইজ একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। গাড়ির সাইজ, চাকা এগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয়। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সবাইকে বিআরটিএ পৌঁছে দেবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।"
বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা আসে গত বুধবার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। বিআরটিএ ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে ওই সভায় ঢাকার দুই মেয়রও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।
এরপর দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং এ ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে বিজ্ঞপ্তি দেয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিআরটিএ।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুদিন ধরে ঢাকার মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডাসহ আরও কয়েক জায়গায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকাশচালক এবং এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা। রোববার বিক্ষুব্ধরা মিরপুরে কয়েকটি বাসে হামলাও চালায়।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশ থেকে আগামী ২৭ মে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ভ্যান ও ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদ’। সরকারে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা।
ওই কর্মসূচি ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পরই ঢাকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা না রাখার ঘোষণা দিলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।
প্রেস ক্লাবের সামনের সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক লিপন বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ঢাকা সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও সড়ক মন্ত্রণালয়– আপনারা যে তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
“সরকারকে আমরা বলতে চাই, এ মাসের মধ্যেই আপনাদেরকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। প্রত্যাহারের জন্য আমরা এক ঘণ্টার নোটিস দিতে চাই না, এই মাস সময় নেন। আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আগামী ২৭ মে ঢাকার শ্রমিকদের সাথে সারাদেশে ৬৪ জেলায় আন্দোলন তথা সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”
লিপন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আমরা যে সময় দিয়েছি, এর মধ্যে যদি সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
ঢাকার রাস্তার অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত বাহনের চালক, মালিক ও যাত্রীদের নিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে এলাকাভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন সংগ্রাম পরিষদের এই নেতা।