ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় কোথাও কোথাও যানজটও তৈরি হয়।
Published : 06 Aug 2024, 01:44 PM
গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালা বদলের পর মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন কম দেখা গেছে, সঙ্গে লোকসমাগমও কম ছিল। তবে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় কোথাও কোথাও যানজটও তৈরি হয়।
রাতের কারফিউয়ের সময় শেষ হয়েছে মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। সকালে মিরপুরের কালশী, কুর্মিটোলা, বনানী, মহাখালীর রাস্তায় গণপরিবহন কম দেখা যায়; তবে যেসব পরিবহন চলাচল করছিল সেগুলোতে যাত্রীরা ঝুলে ঝুলে যাচ্ছিলেন। এ সড়কে ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যকেও দেখা যায়নি।
সড়কে লোকসমাগম কম থাকলেও অফিসগামী যাত্রীরা মোড়ে মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী মাহতাব আহমেদের গন্তব্য মহাখালী, অফিস যেতে মিরপুরের কালশীতে প্রায় এক ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
মাহতাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। রাস্তায় গাড়ি খুবই কম।”
কাকলী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন রাইড শেয়ারের চালক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, “রাস্তায় লোকজন তেমন নাই। অনেকক্ষণ ধরে বইসা আছি, যাত্রী নাই।”
মিরপুর ১৪ নম্বর ও ১০ নম্বর এলাকা ঘুরে বিভিন্ন বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম দেখা গেছে। পাশাপাশি চলছিল অটোরিকশাও।
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার অটোরিকশা চালক সুমন মিয়া বলেন, “রাস্তায় কোনো গ্যাঞ্জাম নাই, তয় যাত্রীও কম।”
সকাল থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে বনানীর রাস্তায় মিনিবাস চলাচল শুরু হয়। তবে আওয়ামীপন্থী মালিকদের বাস চলছে না বলে জানান হেলাল উদ্দিন নামে এক পরিবহন শ্রমিক।
তিনি বলেন, “লাইনের গাড়ি ঠিকই চলতেছে। তবে এতদিন যেই নেতারা জোর কইরা লাইনে গাড়ি ঢুকাইছিল, সেই গাড়ি চলবে না।”
মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যানজট তৈরি হয় বিজয় সরণি মোড়ে। এসময় ধানমন্ডি থেকে বাইকে করে গুলশান যাচ্ছিলেন শফিক আহমেদ। যানজটে পরে তিনিসহ আশেপাশের কয়েকজন মিলে রাস্তাটির যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
শফিক বলেন, “দেখেন অবস্থা, এই ফাঁকা সড়কেও জ্যাম লাগাই দিছে।”
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি ও মহখালী রেলগেইট এলাকায় সড়কে লোক সমাগম কম দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বাস, ট্রাকও চলাচল করছে।
তবে গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহন কম থাকায় রাস্তা অনেকটা ফাঁকা ছিল। গণপরিবহন না পেয়ে অফিসগামী যাত্রীরা রিকশায় চলাচল করেছেন।
যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, রায়েরবাজার মহাসড়কে সরকারি অফিসগামী ও বেসরকারি গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এসময় কর্মজীবী ছাড়া কোনো পথচারী দেখা যায়নি।
মতিঝিলের ব্যাংক ও পুঁজিবাজার পাড়ায়ও লোকসমাগম তুলনামূলক কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সমাগম কিছুটা বাড়তে থাকে।
সাইনবোর্ড-গুলিস্তান-মতিঝিল সড়কে চলাচল করা হিমালয় পরিবহনের হেল্পার জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে একবার মতিঝিল গেছিলাম, এহন সেকেন্ড (দ্বিতীয়) ট্রিপ নিয়া যাইতেছি। রাস্তায় কোনো জ্যাম নাই।”
সাইন বোর্ড থেকে হিমালয় পরিবহনে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চাকরি তো যেতে হবে। অফিস খুলেছে, আমাদের তো নির্দেশ মানতে হবে। তবে, সকাল থেকেই পরিবেশ ঠাণ্ডা দেখে ভালো লাগছে। রাস্তায় লোক কম, মনে হয় বিকেলের মধ্যে সবকিছু নরমাল হয়ে যাবে।”
সবজি ও কাঁচামাল নিয়ে যাত্রাবাড়ী আড়ৎ থেকে পণ্যবাহী ছোট ছোট ট্রাক ও রিকশা চলাচল শুরু করেছে।
দূরপাল্লার পরিবহনও কম
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম চলছে। এই টার্মিনাল থেকে সবচেয়ে বেশি বাস চলে এনা পরিবহনের।
মঙ্গলবার টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, এনা পরিবহনের দুটো কাউন্টারই বন্ধ। ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে সৌখিন ও ইমাম পরিবহন চলছিল, এর বাইরে অন্যান্য পথে দুয়েকটি বাস চলতে দেখা যায়।
ইকবাল নামে এক পরিবহন শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার চেইঞ্জ হইছে- এ কারণে এনা পরিবহন চলবে না; মালিক তো আওয়ামী লীগের ছিল। নতুন নামে হয়ত আসবে তবে এই ব্যানারে আর চলবে না।”