ঝড়ের মধ্যে রাত দেড়টায় পটুয়াখালীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার।
Published : 27 May 2024, 09:57 AM
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে তাণ্ডব চালাতে চালাতে স্থলভাগে উঠে এসেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে ‘প্রবল’ থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার সকাল ৭টার দিকে এ ঝড়ের কেন্দ্রভাগ খুলনার কয়রা এলাকায় অবস্থান করছিল।
অবশ্য স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ঝড়ের যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে ওই সময় রেমালের কেন্দ্রভাগ ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মাঝরাত থেকেই অতিক্রম শুরু হয়েছে৷ এখনো পুরোপুরি করেনি, সেন্টারটা এখন ল্যান্ডে আছে৷ আরও ২/৩ ঘণ্ট লাগবে পুরোপুরি অতিক্রম করতে৷"
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
এ ঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর রাত দেড়টায় পটুয়াখালীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ১১১ ঘণ্টায় কিলোমিটার।
রেমাল ঠিক কখন উপকূলে আঘাত হেনেছিল, তা নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের ভাষ্যে গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রোববার দুপুরেই উপকূল স্পর্শ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টার পর এর কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে।
কিন্তু ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে ঝড়ের কেন্দ্রভাগ উপকূলে উঠে আসতে শুরু করে রোববার মধ্যরাতে। ওই সময়টাতেই তীব্র ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে বলে আমাদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসও ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে।
এদিকে সোমবার ভোর থেকে রাজধানীতে দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি চলছে দেশের বেশিরভাগ এলাকায়।
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে তিন জেলায় চারজনের মৃত্যুর খবর এসেছে; বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন দুর্গত জেলাগুলোর ৩০ লাখের বেশি গ্রাহক।
স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ কয়েক জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম।
তবে ঝড়ের বিপদ পুরোপুরি কেটে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।
• ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ।
• চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।
• চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সব ধরনের কাজ বন্ধ। বন্দরের জেটি থেকে সব জাহাজকে পাঠানো হয়েছে সাগরে।
• উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন আট লাখের বেশি মানুষ।
• উপকূলীয় জেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ডপলার রেডারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোংলা ও পায়রা বন্দরকে আগের মতই ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে।
এছাড়া উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আছে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সাবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।