জি কে শামীমের সাজার রায় হলেও তার মা আয়েশা আক্তারকে খালাস দিয়েছে আদালত।
Published : 27 Mar 2025, 12:13 PM
অবৈধ সম্পদের মামলায় বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে সাড়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামি জি কে শামীমকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তার ২৯৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জি কে শামীমের মা আয়েশা আক্তারকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছিল। অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা ‘প্রমাণিত না হওয়ায়’ আদালত তাকে খালাস দিয়েছে।
এ মামলায় আরেকটি ধারায় মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগও আনা হয়েছিল। ‘অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়’ আদালত তাদের দুজনকেই এই ধারার অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে।
এদিন রায় ঘোষণার আগে জি কে শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে জামিনে থাকা আয়েশা আদালতে হাজির ছিলেন না।
দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহাম্মদ আলী সালাম বলেন, “এ রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না। পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর কমিশনের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আপিল করা হবে কি না।”
অন্যদিকে জি কে শামীমের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, “এ রায়ে আমরা সংক্ষুদ্ধ। উচ্চ আদালতে আপিল করব। মামলায় কিছু ফাক-ফোকর রয়ে গেছে। আশা করছি, উচ্চ আদালতে এর বেনিফিট পাব। তার সাড়ে পাঁচ বছরের সাজাও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তবুও আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর এই মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। বাদী নিজেই মামলাটি তদন্ত করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও মোট টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
এছাড়া শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার করা নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস দুদক পায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর দুদকে এই তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদন পাওয়ার পর পরের বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর শামীম ও তার মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
গত ২০ মার্চ দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। শুরুতে ৩০ জানুয়ারি রায়ের তারিখ রাখা হলেও পরে তা পিছিয়ে যায়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের জেরা করা হয়। নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের জন্য ২৭ মার্চ দিন রাখে আদালত।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি তা অস্বীকার করে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।
গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।
শামীমের বিরুদ্ধে মাদক, অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইনেও তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় ২০২২ সালে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমের ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীর ৪ বছর করে কারাদণ্ড হয়।