এনিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের দাবি।
Published : 09 Oct 2022, 08:00 PM
সরকারি ২৯ প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা হলেও জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না বলে দাবি করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবাদের মুখে রোববার এক তথ্য বিবরণীতে এই আশ্বাস বাণী আসে সরকারের কাছ থেকে।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, “রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং উক্ত পরিকাঠামোসমূহের নিরাপত্তা সামান্যতম বিঘ্নিত হলে জনগণের বিপুল ক্ষতির কারণ হবে।
“এর সাথে জনগণের তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত অধিকার ব্যাঘাত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বা তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের সাথে ইহা সাংঘর্ষিক নয়।”
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেওয়া ক্ষমতাবলে’ গত রোববার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইসিটি বিভাগ।
রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণাকে ‘ভয়াবহ’ বলে প্রতিক্রিয় জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অবাধ তথ্য প্রবাহের স্বার্থে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে আমরা যেটা বলছি যে, কর্তৃত্ববাদী এই সরকার যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে সমস্ত তথ্য পাওয়া থেকে।”
এই তালিকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও।
তিনি বলেন, “এই তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর। কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি সমর্থিত না হওয়ার পরেও এই তালিকার প্রকাশ বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।”
এ তালিকার মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আমূল সংস্কারের দাবির যৌক্তিকতা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি।
রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এমন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য প্রাপ্তিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, আশ ঙ্কা প্রকাশ করেছেন টিআিইবির নির্বাহী পরিচালকসহ অনেকে।
২৯ প্রতিষ্ঠানের তথ্যের সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ
‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’র তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ: টিআইবি
এই সরকার এখন দেশের জন্য বোঝা: ফখরুল
তবে আইসিটি বিভাগ বলছে, “কতিপয় রাজনৈতাক দল ও প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসমূহ থেকে কোনোরূপ তথ্য পাওয়া যাবে না মর্মে বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, “গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হচ্ছে সরকার কর্তৃক ঘোষিত এইরূপ কোনো বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামো, যাহা কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কোনো ইলেকট্রনিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চারণ বা সংরক্ষণ করে এবং যাহা ক্ষতিগ্রস্ত বা সঙ্কটাপন্ন হলে জননিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্বের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।”
আইসিটি বিভাগ বলছে, “উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে সরকার ও জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ও আর্থিক তথ্যাবলী সংরক্ষিত থাকায় এদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।”
তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো সমূহের আইটি অডিট সম্পন্ন, যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণ, সঠিক মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ, যথাযথ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানব সম্পদ নিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রমের দ্বারা পরিকাঠামোগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসাধারণকে নিরাপদ ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা পৌঁছে দেওয়াই এই ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য।
ভারত, কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসমূহ চিহ্নিত করা আছে বলে উল্লেখ করা হয় তথ্য বিবরণীতে।