এই সরকার এখন দেশের জন্য বোঝা: ফখরুল

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের সাফল্য দাবি ফাঁকি বলে বিএনপি মহাসচিবের দাবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 12:54 PM
Updated : 5 Oct 2022, 12:54 PM

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনাকে ক্ষমতাসীনদের বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখিয়ে বিএনপি বলেছে, এই সরকার এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয়ে দেশের বড় এলাকা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বুধবার একথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায় নেই, দায়িত্বশীলতার ব্যাপার নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এই ঘটনাটা (জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) তারই একটা প্রমাণ যে তাদের দায়িত্বশীলতার অভাব এবং তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এই ঘটনা ঘটছে।

“সেই কারণে কিন্তু আমরা বার বার করে বলছি, এই সরকার এখন একটা বারডেন হয়ে গেছে দেশের উপরে, একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে।”

এই অবস্থার পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তিনি।

দুপুরে ঢাকার আসাদ গেইটে দলের স্থায়ী কমিটির অসুস্থ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপর সেখানেই বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি যে, এটা (জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। যে কথাটা আমাদের টুকু সাহেব (সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু) বললেন যে, এখানে যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এবং যে কাঠামোগত ব্যাপারটা থাকে অর্থাৎ টেকনিক্যাল সাইড যেটা থাকে, সেখানে টোটালি চুরি হয়েছে বলেই আজকে এই বিপর্যয় ঘটেছে।”

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের কৃতিত্বের যে দাবি সরকার করে আসছে, তা নিয়ে তিনি বলেন, “এ থেকে যেটা বোঝা যায়, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকা-পয়সাও বহু বানিয়েছে। বানিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে এই ধরনের একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”

Also Read: ফের গ্রিড বিপর্যয় কেন? বিদ্যুৎ বিভাগও অন্ধকারে

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু বলেন, “সারাদেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে, সেগুলো ইউনিফাইড স্পেসিফিকেশনে দেয় নাই, যার ফলে কোনো পাওয়ার স্টেশন খুব নিউ জেনারেশনের, আবার কোনটা পুরনো। এদের সিনক্রোনাইজ করা সম্ভব না।

“শুধু জেনারেশনে বিদ্যুৎ চলে না, ট্রান্সমিশনে লাগে, ডিসট্রিবিউশনে লাগে, এগুলোর কিন্তু খুব একটা উন্নতি হয় নাই। খালি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েই গেছে। বানিয়ে যাওয়ার ফলে আজকে যেটা হয়েছে, এটা আরও হবে ভবিষ্যতে।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন কীভাবে করবে- জানতে চাইলে টুকু বলেন, “আমরা একবারে প্রাইভেটাইজেশনে যাব না। করলে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাইস কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মিক্সড করব।

“আমাদের যে পলিসি ছিল ৩০% বেসরকারি এবং ৬০% সরকারে থাকবে- এভাবে আমরা বিদ্যুতের উন্নয়ন করব। এই উন্নয়নের সাথে সাথে ট্রান্সমিশন ও ডিসট্রিবিউশনটাও সমন্বয় করে করব, যাতে সমস্যা না হয়।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, “আওয়ামী মডেল অব ইকোননি- এটা (বিদ্যুৎ বিপর্যয়) তার প্রতিফলন। তারা করেছে কী? দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে যত তাড়াতাড়ি টাকা বানানো যায়।

“সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে,এগুলোর টেন্ডার হয় নাই, তাদের(সরকার) নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। আইনও করা হয়েছে যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা যাবে না। তাদেরকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধাসহ ফিক্সড চার্জসহ নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে, জনগণ আজকে তার মূল্য দিচ্ছে।”

‘তথ্য উপরিকাঠামো ঘোষণা ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ’

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৯ প্রতিষ্ঠানের তথ্যের সুরক্ষায় এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, এটা ‘ভয়াবহ ব্যাপার’।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করে গত রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

এসব পরিকাঠামোর কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থায় বেআইনি প্রবেশ এবং তথ্য ব্যবস্থাপনায় বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে।

ফখরুল বলেন, “এখানে আমরা যেটা বলছি যে, কর্তৃত্ববাদী এই সরকার যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে সমস্ত তথ্য পাওয়া থেকে।”

তথ্য প্রবাহ অবাধ করার স্বার্থে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।