শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে সাভারের অনেক কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণার দুদিন পরই তা আবার খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Published : 14 Sep 2024, 12:25 AM
সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো শনিবার থেকেই খুলছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের কারখানায় মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের এক বৈঠকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তবে আলাদাভাবে কেউ যদি মনে করে নিরাপত্তা ইস্যু বা অন্য কারণে পরে খুলবে, সেটাও করতে পারে। সামগ্রিকভাবে কাল (শনিবার) থেকেই কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে কারখানা বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পোশাক খাত। কারখানা খোলা রাখতে গত সপ্তাহজুড়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও তা হয়ে ওঠেনি। আশুলিয়ার পাশাপাশি গাজীপুরেও শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে নামেন।
এমন অবস্থায় শুক্রবার হা-মীম গ্রুপের কারখানায় গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিবসহ অন্যরা বৈঠকে বসেন। কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও তারা আলোচনা করেন।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও খোলা রাখা হয় গাজীপুরের অনেকগুলো কারখানা।
পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর সহায়তায় এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, মূলত শুক্রবার পোশাক শ্রমিকদের ছুটির দিন। কিন্তু গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতেই মালিকপক্ষের লোকজন কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুক্রবার পুরো জেলায় মোট কারখানার প্রায় ৩০ ভাগ চালু থাকে। তবে যে আটটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেগুলো বন্ধই আছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি বা গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্দোলন-বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবারও সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরের আড়াই শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে ৯৪ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। শুধু আশুলিয়াতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয় ৮৬টি কারখানা।
পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়।
চলমান এ অসন্তোষের কারণে পোশাক খাতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে বৃহস্পতিবার জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার কারখানা খোলার রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের কারখানায় বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেনাবাহিনীর তরফ থেকে আরও নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া যৌথবাহিনীর অভিযানে নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। বিশৃঙ্খলাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পোশাক শিল্পখাতে উদ্ভুত শ্রম অসন্তোষ নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিজিএমইএ।
আরও পড়ুন-
শ্রমিক অসন্তোষ: আশুলিয়ায় ৮৬টি কারখানায় বন্ধের নোটিস, ১৩৩টিতে ছুটি
আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ছয় মামলা, বহিরাগতসহ আসামি ১৯১০
শ্রমিক অসন্তোষ: পোশাক খাতে '১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল'
শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ৪৫ কারখানা