“প্রধান উপদেষ্টা চাবি দিয়ে তালাটা খুললেন, তিনি চীনের রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সরাসরি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করার কথা বলেছেন,” বলেন তিনি।
Published : 30 Mar 2025, 04:37 PM
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, চীন তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে আগামী ৫০ বছরের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে রোববার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে পানিসম্পদ নিয়ে দীর্ঘ, বিস্তৃত ও গভীর আলাপ করেছেন। বাংলাদেশের রিভার সিস্টেমকে আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, ব্যবহার করতে পারি, এসব বিষয়ে চীন আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত বড় দৃষ্টান্ত।
“তারা এসব বিষয়ে পৃথিবীতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। আপনারা তাদের বিভিন্ন বিশাল বিশাল প্রজেক্টগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন, তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বুধবার চীনে যান। চারদিনের সফর শেষ করে তিনি শনিবার দেশে ফিরেছেন।
জলবিদ্যুৎ, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের মত বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও চীন ‘একমত হওয়ার’ বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে এসেছে।
শুক্রবার উভয় পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমনওইউ) বাস্তবায়নের ব্যাপারেও ইতিবাচক আলোচনা করে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতির বরাতে বাসসের খবরে বলা হয়, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে ঢাকা স্বাগত জানিয়েছে।
এছাড়া শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্সিয়াল বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে’ অংশ নেন।
ইউনূসের এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে তার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, “সে সাক্ষাতের সময় চীনের প্রথিতযশা পানি বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের পানির যে চাহিদা সে চাহিদা পূরণে কী কী উপায় হতে পারে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। আর চীনা পক্ষ আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এর ভেতরে রয়েছে নদীর পানি সংরক্ষণ, বন্যা পূর্বাভাস, বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়।”
তিস্তা প্রকল্প আগেই হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, “এতে আমরা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছি, তারাও এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন জয়েন্ট স্টেটমেন্টে।”
এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, “আমি তিস্তার কথাটি বলেছি আগামী ৫০ বছরে আমাদের পানিসম্পদ ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে। চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের অলরেডি একটা প্রজেক্ট আছে। প্রশ্নটি ছিল এ প্রজেক্টটি নিয়ে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাবো। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একটি কথা সবসময় বলেন, ‘কোথায় চাবি খুলতে হবে সেটি আমাকে বলে দেন, আমি চাবি খুলে দেব’। এ সফরে আমরা চাবিটা খুলে দিয়েছি।
“তিনি চাবি দিয়ে তালাটা খুললেন, তিনি চীনের রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সরাসরি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করার কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হয়েছি। আপাতত এ টুকু।”
সংবাদ সম্মেলনে উপপিস্থত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিড) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।