কর্মকর্তারা মনে করেন, তথ্যের মালিক কেবল তিনিই, অথচ তথ্যের মালিক কিন্তু জনগণ। তাদের উচিত তথ্যের রক্ষক হিসেবে তাদের ভূমিকা বোঝা, দ্বাররক্ষী হিসেবে নয়,” বলেন তিনি।
Published : 28 Sep 2024, 08:10 PM
দেশের বিদ্যমান তথ্য অধিকার আইনের ‘দুর্বলতার’ কথা তুলে ধরে তা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, “এ আইনে অনেক দুর্বলতা আছে। যে কারণে আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, সরকারি উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে, তথ্য অধিকার ফোরাম একটি সংস্থা আছে, তাদের নেতৃত্বে গণমাধ্যমসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে, যেই স্বপ্ন থেকে এ আইন করা হয়েছিল, সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়।
“২০০৯ সালে যখন তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়, তখন সেটাকে একটা অর্জন হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল এ অর্জন কেবলই কাগজে-কলমে, তার প্রাপ্তিটা সরাসরি পাওয়া যায়নি। বিশাল এক জনগোষ্ঠী এ আইনের ব্যবহার ও উপযোগিতা সম্পর্কে অবহিত ছিল না। এই আইনের সংস্কার জরুরি।”
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সভার প্রধান অতিথি হলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
আওয়ামী লীগ সরকার ‘দলীয় ক্যাডার’ দিয়ে তথ্য কমিশন পরিচালনা করেছে অভিযোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এ কারণেই মানুষকে তথ্য চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা তথ্যকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করলেও বাস্তবে তা জনগণের।
“সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য চাইতে গেলে একজন মানুষকে কেন মামলা-হামলার শিকার হতে হবে? কারণ হচ্ছে, এ আমলাতন্ত্রের মধ্যে এখনও ব্রিটিশ শাসনামলের মত এক গোপনীয়তা কাজ করে। কর্মকর্তারা মনে করেন, তথ্যের মালিক কেবল তিনিই, অথচ তথ্যের মালিক কিন্তু জনগণ। তাদের উচিত তথ্যের রক্ষক হিসেবে তাদের ভূমিকা বোঝা, দ্বাররক্ষী হিসেবে নয়।”
তথ্য কমিশনকে দলীয়করণ মুক্ত করার দাবি তুলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার, তথ্যের অবাধ প্রবাহ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের অপরিহার্য উপাদান। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি।
“…দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, বাংলাদেশে ‘কমিশন’ শব্দ যতগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, তার সবগুলো প্রতিষ্ঠান আমাদের অবসরপ্রাপ্ত দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিদের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পরিণত হয়েছে।”
তথ্য কমিশন কেবল কমিশনারদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।
তথ্য অধিকার আইনকে নাগরিকের ক্ষমতায়ন ও স্বচ্ছতা প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল হাকিম। তথ্য কমিশন বাংলাদেশের পরিচালক এস এম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।