আফতাব আহমদ: বাতিঘর বালা

আফতাব আহমদ
Published : 20 July 2022, 08:08 AM
Updated : 20 July 2022, 08:08 AM


প্রবল ঝড়ের রাত। বৃষ্টির বর্শা কাঁধে কালো দানবেরা
দুমড়ে মুচড়ে ভাঙে জল, মায়াবী বসত ভিটা বৃক্ষ নগরী।
ভেজা সপ-সপে ডেক থেকে বেচারা জাহাজী দড়ি ছিঁড়ে
গিয়েছে ঢেউয়ের বুকে, লুক আউট দেখতে পারেনি।

দেখেছে সপ্তদশী, বাবার আদরে থাকা দিনভর আর রাত হলে
ছানিচোখ বাবাকে বালিশে রেখে কাঁধে তুলে নেয় যে প্রহরী
ক্লান্তিহীনা বাতিঘরের প্রদীপ, যেন শেষ আশ্রয় সভ্যতার:
ভয় নেই, আমরা কাছেই আছি মানুষের, শুধু ভেসে থাকো।

মেঘের হুঙ্কার আছে, এক ফোঁটা আলো নেই, ঢেউ শুধু ঢেউ,
বয়াটিকে প্রাণপণে ধরে রেখে শেষ বক্ষা করতে পারেনি।
থেমে থেমে বজ্রের আলো আঁধারিতে হাত চুল কাঁধ মাথা
দেখেছে মেয়েটি। ঘুমন্ত বাবা তবু কালক্ষেপ করেনি কিশোরী

ইঞ্জিন বোট সে চালাতে জানে, কিভাবে জলের থাবা থেকে
মানুষকে আশ্রয় দিতে হয় শক্ত মাটির সে তা জানে।
সিসিফাস চেনে না সে, তবু, হাল ছাড়া ধাতে নেই তার।
আধমরা লোকটিকে আঁচলের উত্তাপে বাঁচিয়ে এনেছে।

মেঘ সরে গেছে ভোরে। নিস্তেজ হয়েছে জল রাশি।
জাহাজের স্পিডবোট অবশেষে আধমরা লোকটিকে
বাতিঘর থেকে নিয়ে গেছে। মেয়েটির নাম সে জানেনা।
মেয়েটি স্ব-দায়িত্বে ফিরে গেছে ডুবন্ত মানুষ বাঁচাতে।

জাহাজ ভেসেছে জলে বন্দর থেকে বন্দরে নতুন শহরে।
মেয়েটি বাঁচেনি। মাটি নয় অবশেষে ঢেউ তাকে আশ্রয়
দিয়েছে বুকেই। সবাই ভেসেছে, সে-ই শুধু ভাসতে পারেনি।
বেহুলা জলেই গেছে। জলেই হেসেছে মেঘরাশি।

প্রতি মাসে একটি অমল খাম নিয়ে আসে ডাক হরকরা
দিনমান বন্ধ খাম, সন্ধ্যে হলে কে যেন আলগোছে
চিঠি খোলে, চিঠি পড়ে, সন্তর্পণে জলে নেমে যায়।
নির্দিষ্ট প্রাপক নেই তবুও নিয়ম করে সেই চিঠি আসে।

জলের আকুতি থাকে, উষ্ণতা থাকে আঁচলের
লেখা থাকে: ভাটিগাঁও, উজ্জয়নী তীর, বাতিঘর বালা।

১৮ জুন, ২০২২