“তার নিবিড় কাব্যময় গদ্যভাষ পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় ইতিহাসের ক্ষতের মুখোমুখি, এ মানব জীবন কতটা ভঙ্গুর, উন্মোচিত করে সেই সত্য,” বলেছে নোবেল কমিটি।
Published : 10 Oct 2024, 05:13 PM
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক, কবি হান কাং।
বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১২১তম লেখক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, তার নিবিড় কাব্যময় গদ্যভাষ পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় ইতিহাসের ক্ষতের মুখোমুখি, এ মানব জীবন কতটা ভঙ্গুর, উন্মোচিত করে সেই সত্য।
“শরীরের সাথে আত্মার, জীবিতের সাথে মৃতের যোগাযোগ নিয়ে এক অনন্য সচেতনতা কাজ করে তার লেখায়। আর কাব্যময় ও নিরীক্ষাধর্মী লেখনশৈলী সমকালীন গদ্যের দুনিয়ায় তাকে নিয়ে গেছে একজন উদ্ভাবকের কাতারে।”
পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার পাবেন হান। গত বছর এ সম্মাননা পেয়েছিলেন নরওয়ের লেখক, নাট্যকার ও কবি ইয়ন ফোসে।
৫৩ বছর বয়সী কথাসাহিত্যিক হান কাং দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় এবং সাহিত্যে দেশটির প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পেলেন। এর আগে ২০০০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দে-জুং শান্তিতে নোবেল পান।
হান কাং তার ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের জন্য ২০১৬ সালে পেয়েছিলেন ‘ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার’।
ওই উপন্যাসে অন্ধকার পরাবাস্তব জীবনের এক গল্প চিত্রায়িত করেছেন লেখক, যেখানে একজন নারী মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন এবং গাছ হয়ে যেতে চান।
কর্তব্যনিষ্ঠ একজন স্ত্রী ইয়ং-হাই এর গল্প তুলে ধরা হয়েছে ওই উপন্যাসে, যিনি ভয়ঙ্কর সব দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যান। ঘটনাগুলো বারবার তার ঘুমের মধ্যে ঘটতে থাকে। পরে তিনি সমাজের প্রচলিত কালাকানুনের বিরুদ্ধে যান, মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন। অস্বাভাবিক আচরণের কারণে তার পরিবারের সবার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। ইয়ং-হাই মানসিকভাবে অসুস্থ বলে তারা ধরে নেন।
হানের এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৯ সালে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ সিনেমা তৈরি করেন পরিচালক লিম উ-সং। এরপর তার আরেকটি বই অবলম্বনে ২০১১ সালে ‘স্কারস’ নামে সিনেমা তৈরি করেন একই পরিচালক।
২০০২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘ইওর কোল্ড হ্যান্ডস’ এ চিত্রকলার প্রতি হানের আগ্রহ ফুটে ওঠে। সংগীতের প্রতিও তার আগ্রহ রয়েছে।
১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার হাংজু শহরের জন্ম হানের। তার বাবাও স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক। ১৯৯৩ সালে ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে বেশ কিছু কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যের ক্যারিয়ার শুরু হয়। দুই বছর পর ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় ছোটগল্প সংকলন ‘লাভ অব ইউসু’। ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতি পান।
তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’ (২০১০), হিউম্যান অ্যাক্টস (২০১৬), দ্য হোয়াইট বুক (২০২১৭), উই ডু নট পার্ট (২০২১), গ্রিক লেসনস (২০২৩) ও ছোটগল্প সংকলন ‘ইউরোপা’।
নোবেল কমিটি এক্সে হান সম্পর্কে লিখেছে, “তার লেখায় দ্বিমুখী যন্ত্রণা বা বেদনার চিত্র ফুটে উঠেছে। শারীরিক ও মানসিক পীড়ার সংযোগ রয়েছে তার লেখায়, যেখানে প্রাচ্যের চিন্তা-ভাবনার ঘনিষ্ঠ সংযোগ বা প্রতিফলন রয়েছে। শরীর ও আত্মার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে অনন্য সচেতনতা তৈরি করেছেন তিনি।”
এবারের সাহিত্যে নোবেল জয়ের খবর দিতে হানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুইডিশ অ্যাকাডেমির পারমানেন্ট সেক্রেটারি ম্যাটস মাম।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আমি হান কাংয়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। আজকের দিনটা তার অন্য সাধারণ দিনের মতই ছিল; এই যেমন মাত্রই ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করেছেন।
“তিনি যে এমন খবর পাবেন, সেটার জন্য সত্যিই তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।”
হানের নোবেল পাওয়ার খবরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সক ইয়ায় ফেইসবুক পোস্টে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইয়ুন সক লিখেছেন, “২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়ায় হান কাংকে অভিনন্দন। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্যের ইতিহাসের জন্য বিরাট অর্জন। জাতীয় এই উপলক্ষ গোটা দেশ উদযাপন করবে।”
বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার ওপর আলো ফেলার স্বীকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিক্টর অ্যাম্ব্রস ও গ্যারি রাভকুন এ বার চিকিৎসার নোবেল জিতেছেন।
মঙ্গলবার ঘোষণা হয় পদার্থবিদ্যার নোবেল। যাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে ‘মেশিন লার্নিং’ বা যন্ত্রকে শেখানোর পথ খুলে গিয়েছিল, সেই দুই বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের জন জে হপফিল্ড এবং কানাডার জেওফ্রে ই হিন্টন চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন।
এরপর বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নের নোবেল। প্রাণের অপরিহার্য জৈব অণু প্রোটিনের জটিল গঠন রহস্য উন্মোচনে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার এবং ব্রিটিশ গবেষক ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার।