Published : 25 May 2019, 07:45 PM
খরগোশ ও বাবা বিষয়ক গাজরের দুপুর
শাহবাগ মোড়। নোমান ভাই ও আমি, গাজর খাই। গাজরের কোষে খরগোশ লাফায়- নিজেকে ভাবতে শিখি খরগোশ'ছা। নোমান আমাকে আঁকতে গিয়ে ওই খরগোশটাকে আঁকেন- যে খরগোশটা আমার মা ছিলেন। বাবাকে দেখি নি বলে- কিংবা তিনি বাবার খোঁজ জানতেন না বলে- কোনো পুরুষ খরগোশের ছবি আপনারা পাবেন না। কারণ- আমার বাবা হয়তো খরগোশ ছিলেন না, ছিলেন অন্য কেউ। এই অন্য কেউ'কে খুঁজতে গিয়ে নোমান ভাই বললেন- তুই আমার সহোদর ছিলি- কোনো কালে। আমার বাবাই তোর বাপ হয়-রে… সেদিন থেকে তাকে আমি ভাই বলে জানি- নোমান আমার একজন ভাইয়ের নাম যে!
মুন্সিপাড়া
শুক্কুরবার আইলে মুন্সিপাড়া যামু- আর যাওয়া হয় না। ভাদ্দর মাস আইতে অনেক দেরি- তালপুকুর পাড়ে সাঁতার পইরা থাহে- জীবন কিনারা খুঁইজা পায় না।
মুন্সিপাড়ায় আমারে শৈশব থাহে। পাড়ার দিঘিত- ন্যাংটা দিন লাফায়, টঙের উপ্রে ঝোলে শিরিনের ব্রা। বাদ যোহর- গোসলের টাইম, দাদিগো দুধ দেইখ্যা হাইসা মরে বালক ব্যালা। সূর্য ঢইলা পরতে পরতে দাদাগো হাত- আঙ্গো শিশ্ন খোঁজে। সানোয়ার পাগলা কয়- বুইড়ারা অ্যাতো যাউরা ক্যা- আঙ্গো হোল হাতায়? হাসতে হাসতে আমরা বড় হই- বিশেষ অঙ্গটা টাটায়, মাঝে মাঝে ঝাইপা ওঠে চ্যাঙ মাছের লাহান।
ওই যে নান্নু দাদা- টঙে বইসা থাহে, আমারে রূপকথা হোনায়। পেপারের ছবি দেইখা কত কিছু জিগাই- সেইসব অমীমাংসিত উত্তর- প্রশ্নের পাহাড় ঘুমাই যায়। দাদায় ঘোমায় চারমাথায়- মসজিদের আজান শুনতে শুনতে- সেইসব গাল-গল্প বদরের আড়ার দিকে দৌড়ায়। পাগলার ভিটায় নতুন নতুন পাগলা আসে আর যায়- শুধু আমার আর ফেরা হয় না- ওই মুন্সিপাড়ায়।
সংসদ অ্যাভিনিউ
সংসদের বকুলতলা পার হয়ে আসতে আসতে- মেয়েদের দেখি- সুন্দরী মেয়েরা কোমল ঠোঁটের উষ্ণতা নিয়ে সুদর্শন ছেলেদের উরু ধরে বসে থাকে। কোনো কোনো ছেলের হাত- মেয়েটার কাঁধ কিংবা কোমড়ে চলে গেলে কোকিয়ে উঠি। লম্পট চাহনির ফাঁক গলে চুমু দিয়ে যায় কতিপয় কাপল। পায়ের ছন্দ ফসকে গেলে দুটি লাজুক মুখ- চোখ ঢেকে হাত দেখায়। দেখি- তরুণ হাতে লেগে আছে তরুণী দুধের ঘ্রাণ।
যারা নিঃসঙ্গ কিংবা প্রেমিকাহীন- সেসব ছেলেরা ওদের দ্যাখে। আর হা-পিত্যেশ করে। কেউবা হাতমারার তাড়া নিয়ে জোর পায়ে ঘরে ফেরে। আমি উঠে যাই ফার্মগেটের ওভার ব্রিজটায়- বাসের পিছে বাস, লেপ্টে থাকা সকাল, ঘামার্ত দুপুর- ওইসব প্রাইভেট কার- মবিল-পেট্রোলের কড়া গন্ধে মাখা ধূমায়িত সন্ধ্যা- বিছানা কাঁপা রাত নিয়ে আনে। একটা হতাশার দিন শেষে ব্যর্থতার রাত- কুটিকুটি করে কেটে যায় প্যাঁচাদের নখে। ওয়েব সিরিজের গল্প হয়ে সংসদ অ্যাভিনিউ কিংবা চন্দ্রিমার ওইসব দেখা-অদেখা চন্দ্রগ্রহণে গ্রাস করে অনন্ত যৌবন।
দি চক্রযান
সেদিন মা'র চোখে মেঘরোদ, মার্বেলবেলার স্মৃতি ঘুরছিলো বাই-সাইকেল টায়ারে। টিউব ভর্তি বাতাস- ফিনিক্স পাখির পাখায় উড়িয়ে পৌঁছায় ছেচল্লিশ ক্রশ।
একটা সাইকেল। বাবা ও ছেলে- তাদের যুদ্ধযাত্রা কোনো আরব্য রজনীর গল্প নয়। পা ও প্যাডেল যেভাবে ক্রমাগত নিউটন সূত্রে প্রতিক্রিয়া করে- সেভাবে ঘুরতে ঘুরতে চিন্তার চাকা আরো ঘনিভূত হয়।
আমরা আবছায়া ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। সেইরূপ চেতনার ক্রেণে নিকটতর বাঙালির রক্তে মিশে রয় সোদা-মাটি-প্রাণ। উজ্জ্বল আয়নায়- সূর্যমুখ- তর্জনী তলোয়ারে চিরায়ত রশ্মি- দু'জন পিতা-পুত্রের কথাও বলে। আমরা তাদের ফটোগ্রাফ করি মুক্তির ক্যানভাসে।
একা
কেউ নেই বলে- ভেবো না একা, অনেকেই আছে বলে ভেবো না একা নই। আসলেই মানুষ একা নয়, একা নয় যেমন জন্ম। একা এবং সঙ্গের ভেতর মানুষ একটু অন্য রকম। যেরকম দেখতে হয়- ঠিক তেমনটা নয়। একটু বৃষ্টির মতোন- কাকভেজা সকালের মত। কিংবা এমনও হতে পারে মাকাল ফল যেমন।
আরও কিছু জিজ্ঞাসার পর, প্রশ্নটা থেকেই যায়- একাকীটা কেমন? রাতের অন্ধকারের মতো হয়ত, হয়ত- বন্ধ ঘরে আলো নিভিয়ে থাকা যেমন। যেমন হতে পারে- ছাদ থেকে ফেলে দেয়া রঙিন বলটার মতোন। নয় কি- এসব একটা ভ্রম? মানুষ পরিভ্রমণ করে সমূহ বিভ্রমের ভেতর।