ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতনামা শেফ হোসে আন্দ্রেস ‘এক্স’ এ লিখেছেন, জাহাজটি থেকে খাদ্যসামগ্রী ১২টি লরিতে বোঝাই করা হয়েছে।
Published : 16 Mar 2024, 10:15 AM
পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বিপর্যস্ত, অনাহারী গাজাবাসীর জন্য খাদ্য সহায়তা নিয়ে প্রথম জাহাজ পৌঁছেছে ভূখণ্ডটির উপকূলে।
এর আগে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা গাজাবাসীর জন্য সহায়তা পৌঁছানোর মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার ২০০ টন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সাইপ্রাস থেকে রওনা হয়েছিল স্প্যানিশ জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’।
ইন্টারনেটে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে গাজা উপকূলের জেটিতে নোঙর করা জাহাজটি থেকে ক্রেন দিয়ে লরিতে ত্রাণের মালামাল বোঝাই করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির বাসিন্দাদের জন্য সমুদ্রপথে সহায়তা পৌঁছাতে গাজা উপকূলে এই জেটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ায় সমুদ্রপথকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তারই প্রথম চেষ্টায় গাজা উপকূলে পৌঁছায় জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এই খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, লেবু, টিনজাত সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার।
গাজায় কার্যকর স্থায়ী কোনো জেটি না থাকায় ডব্লিউসিকে এই জেটি নির্মাণ করেছে। তবে সেখান থেকে খাদ্যসামগ্রী কিভাবে গাজাবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, তা জানা যায়নি।
ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতনামা শেফ হোসে আন্দ্রেস ‘এক্স’ এ লিখেছেন, জাহাজটি থেকে খাদ্যসামগ্রী ১২টি লরিতে বোঝাই করা হয়েছে।
“আমরা কাজটি করতে পেরেছি!” লিখেছেন তিনি।
আন্দ্রেস আরও লিখেছেন, পরবর্তীতে সপ্তাহে কয়েক হাজার টন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা, সেটারই একটা পরীক্ষামূলক উদ্যোগ ছিল এটি।
এদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘ওপেন আর্মস’ জাহাজ এবং এর কার্গো সাইপ্রাসেই পরিদর্শন করা হয়েছে। এরপরই গাজা উপকূলের নিরাপত্তায় সেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
ত্রাণ সরবরাহের এই সামুদ্রিক মিশন সফল হলে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আরো জাহাজ একই পথ অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ওই অঞ্চলে পৌঁছাতে ত্রাণবাহী জাহাজগুলো নতুন একটি সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে পারে।
এছাড়া সমুদ্রপথে সহায়তা পৌঁছাতে গাজা উপকূলে আলাদা একটি ভাসমান ডক তৈরির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি তৈরি হলে দিনে ২০ লাখ মানুষের খাবার পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে হোয়াইট হাউজ। কিন্তু সামরিক একটি জাহাজ ডক তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে ওই পথে যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে সামাজিক শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ায় গাজায় ত্রাণ বিতরণ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া গাজার নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা বিশেষ করে খামার, বেকারি এবং কারখানাগুলো বেশিরভাগই হয় ধ্বংস হয়েছে, নয়ত বন্ধ হয়ে গেছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই ভূখণ্ডে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় ছিল স্থলপথ। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থলপথে সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় সহায়তার ক্ষুদ্র একটি অংশই ঢুকতে পারছে।
ত্রাণবহর গোলাগুলি এবং লুটের শিকার হওয়ায় এর আগে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গাজায় তাদের সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এছাড়া গত সপ্তাহে আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের বান্ডেলের আঘাতে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘ গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ বলে আগেই সতর্ক করেছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় তৈরি এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে অনাহারকে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।
তবে গাজার দক্ষিণের দুটি ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমিত দেওয়া হচ্ছে এমন দাবি করে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইসরায়েল। সাহায্য সংস্থাগুলোই ত্রাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে উল্টো অভিযোগ করছে দেশটি।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে ইহুদী রাষ্ট্রটি।
হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের একটি যুদ্ধবিরতির একটি ‘বিস্তৃত ধারণা’ দিয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘অবাস্তব’ বলেছেন।