এক ব্যক্তি হিজাব না পরে দোকানে আসা মা-মেয়ের মাথায় দই ছুড়ে মারেন।
Published : 02 Apr 2023, 12:38 AM
মাথার চুল না ঢেকে জনসম্মুখে গিয়ে ওই দুই নারী ইরানের আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির বিচার বিভাগ।
ইরান জুড়ে চলছে নওরোজ (ইরানি নববর্ষ) উৎসব। এরমধ্যে মাশহাদ নগরীতে মা-মেয়ে হিজাব না পরে দোকানে যাওয়ায় কট্টরপন্থি এক ব্যক্তির রোষানোলে পড়েন। যে ঘটনার ভিডিও অনলাইন ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, একজন মধ্যবয়স্ক এবং একজন অল্প বয়সী নারী কিছু কেনাকাটা করতে দোকানে ঢুকছেন। মধ্যবয়সী নারীর মাথায় হিজাব থাকলেও সেটা পেছনে সরে গিয়ে তার মাথার বেশিরভাগটাই খোলা এবং চুল দেখা যাচ্ছে। তরুণীর মাথায় হিজাব নেই।
হঠাৎ করে এক ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে দোকানে প্রবেশ করেন এবং ধমকের সুরে তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তরুণী কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি পাশে দোকানের শেলফে রাখা একটি দইয়ের বাটি তুলে নিয়ে মেয়েটির মাথায় দই ঢেলে দেয়। তারপর তার সঙ্গে থাকা নারীর মাথাও দইয়ের বাটি ছুড়ে মারে।
এই দুই নারী মা ও মেয়ে বলে জানায় দ্য টেলিগ্রাফ।
ওই ব্যক্তির এ কাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান দোকানদার। তিনি ছুটি গিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দেন। আরো একজন পুরুষ ক্রেতাকেও সেদিকে ছুটে যেতে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওঠে সমালোচনার ঝড়।
Remarkable video: An Islamist morality police in Mashhad, Iran pours yogurt over the heads of two women for not wearing hejab.
— Karim Sadjadpour (@ksadjadpour) March 31, 2023
In a previous era the shopkeeper may have been afraid to intervene against government thugs, but times have changed in Iran. pic.twitter.com/4PWu4btPhl
অনেক ইরানি একে ২০১৪ সালে দেশটিতে ঘটা বেশ কয়েকটি এসিড হামলার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তবে কেউ কেউ এ ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, দুই নারী অপমানিত হলেও ইরানের সমাজ ব্যবস্থা যে পরিবর্তন এসেছে তার প্রমাণ দোকানদার। যিনি দুই নারীকে অপমানের প্রতিবাদ জানাতে ছুটে গেছেন।
করিম সাদজাদপুর নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘‘উল্লেখযোগ্য ভিডিও: ইরানের মাশহাদে একজন ইসলামপন্থি নীতি পুলিশ হিজাব না পরার কারণে দুই নারীর মাথায় দই ঢেলে দিচ্ছে।
আগের দিন হলে দোকানদার সরকারি ঠগদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে ভয় পেতেন, কিন্তু ইরানে সময় বদলেছে।”
ইরানে গত ২১ মার্চ থেকে নওরোজ উৎসব শুরু হয়েছে, যা ১৩ দিন ধরে চলবে।
এর মধ্যে এ ঘটনায় শনিবার ওই দুই নারী এবং হামলাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় বলে জানায় দ্য টেলিগ্রাফ। তাদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের মুখপত্র মিজান এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, দুই নারীর বিরুদ্ধে ‘হিজাব না পরে আইন লঙ্ঘন করার’ এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘অন্যকে অপমান করা এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইরানে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। যার বিরুদ্ধে গত বছরের শেষ দিকে টানা কয়েক মাস তীব্র আন্দোলন চলেছে।
যে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল মাশা আমিনি নামে ২২ বছরের এক তরুণীর নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু ঘিরে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ‘হিজাব ঠিক মত না পরার’ অভিযোগ তুলে নীতি পুলিশ মাশাকে তেহরানে আটক করেছিল।
ওই তরুণী আটকের তিনদিন পর নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগের তিনদিন সে কোমায় ছিল।
ওই তরুণীর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, গ্রেপ্তারের সময় নির্যাতনের কারণে মাশা অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যায়।
এ নিয়ে পুরো ইরান জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। টানা কয়েকমাস ধরে চলা তীব্র ওই বিক্ষোভ ইরানের ক্ষমাসীনদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
বিক্ষোভের মুখে ইরান সরকার নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রত্যাহার এবং সরকার পতনের দাবি জানায়।
ইরানে হিজাব কী বাধ্যতামূলকই থাকছে
বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়া ইরান সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। যাতে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি নানা মানবাধিকার সংগঠনের।
গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
এখন বিক্ষোভ অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু অনেক নারী এখনো জনসম্মুখে হিজাব না পরে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।