ইরানে হিজাব কী বাধ্যতামূলকই থাকছে

হিজাবকে ইসলামী আইনের অপরিহার্য উপাদান এবং ইরানের অন্যতম প্রধান নীতি বলে বর্ণনা করা হয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2023, 04:18 PM
Updated : 1 April 2023, 04:18 PM

ইরানে হিজাব আইনে কোনো পরিবর্তন আসছে না, বরং দেশটির সরকার নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথাই বলেছে।

বিবিসি জানায়, ইরানের একজন কট্টরপন্থী এমপি শনিবার আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগকে নারীদের হিজাব পরার নিয়ম লঙ্ঘন করা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

হোসেইন আলি হাজি দেলিগানি নামে ওই এমপি নারীদের হিজাব পরাকে ‘ঐশ্বরিক আদেশ’ বলে বর্ণনা করে আরো বলেন, যদি বিচার বিভাগ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে ইরানের পার্লামেন্টের সদস্যরা এ বিষয়ে আইনগত শূন্যতা পূরণে একটি বিল উত্থাপন করবেন।

ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। নারীরা জনসম্মুখে ঠিকমত হিজাব পরছেন কিনা তা দেখতে দেশটিতে নীতি পুলিশ নামে একটি বাহিনী সক্রিয় ছিল।

গত বছর সেপ্টেম্বরে ‘হিজাব ঠিক মত না পরার’ অভিযোগ তুলে ওই নীতি পুলিশ মাশা আমিনি নামে ২২ বছরের এক তরুণীকে তেহরানে আটক করেছিল।

ওই তরুণী আটকের তিনদিন পর নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগের তিনদিন সে কোমায় ছিল।

ওই তরুণীর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, গ্রেপ্তারের সময় নির্যাতনের কারণে মাশা অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যায়।

এ নিয়ে পুরো ইরান জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। টানা কয়েকমাস ধরে চলা তীব্র ওই বিক্ষোভ ইরানের ক্ষমতাসীনদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।

বিক্ষোভের মুখে ইরান সরকার নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রত্যাহার এবং সরকার পতনের দাবি জানায়।

বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়া ইরান সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। যাতে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি নানা মানবাধিকার সংগঠনের।

গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

এখন বিক্ষোভ অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু অনেক নারী এখনো জনসম্মুখে হিজাব না পরে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।

অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত নানা ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছেন। যা বলে দিচ্ছে, সরকারের দমনপীড়নে বিক্ষোভ স্তিমিত হলেও ইরানের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো হাতাশা ও ক্ষোভ বেশ ভালো মতই রয়ে গেছে।

সমাজে এর বিপরীত মতও জোরাল। বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি হিজাব না পরা এক নারীর মুখে এক বাটি দই ছুড়ছেন।

পরচারী নারী ও পুরুষরা তার ওই কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Also Read: মাশা আমিনি: ইরানে বিক্ষোভের আগুন আরো তীব্র হচ্ছে

Also Read: মাশা আমিনি: বিক্ষোভ থামছে না ইরানে, মৃত্যু বেড়ে ৮৩

এ সপ্তাহে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হিজাব আইনে কোনো ধরণের পশ্চাদপসরণ বা শীথিলতা আসছে না।

বলা হয়, ‘‘হিজাব ইসলামী আইনের একটি অপরিহার্য উপাদান এবং এটি ইরানের অন্যতম প্রধান নীতি হিসাবেই থাকবে।”

দেশটির বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেইন মহসেনি-এজেইও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘‘যে নারীরা মাথা না ঢেকে চলেন, কোনো ধরণের ক্ষমা প্রদর্শন না করেই তাদের বিচার করা হবে।”