বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারাসহ ‘গুরুতর’ কিছু অভিযোগে ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউজ বানকো সিকিউরিটিজে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি, মালিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলাও।
Published : 15 Jun 2021, 07:24 PM
মঙ্গলবার থেকে এই ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ করে দেয় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এর মালিকরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্যও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নিয়েছে এক্সচেঞ্জটি।
এই স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান লেনদেন বন্ধ ও মামলা করার তথ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বানকো সিকিউরিটিজ এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার থেকে তাদের লেনদেন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
“এছাড়া দু’দিন আগে ব্রোকারেজ হাউসটির মালিকরা যাতে দেশ তাগ করতে না পারেন, সেজন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।“
এই ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন থেকে টাকা ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছিলেন এর গ্রাহকরা, যারা তাদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে টাকা জমা দিয়েছিলেন।
তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ডিএসইর কর্মকর্তারা দেখতে পান, এই হাউসে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার জন্য খোলা সমন্বিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০ কোটি টাকার ঘাপলা রয়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাউসটির মালিকরা গ্রাহকদের এই টাকা নয়ছয় করেছেন।
আরও তদন্তের পর জানা যাবে আসলে কী ঘটেছে; তারা টাকা সরিয়ে ফেলেছেন নাকি গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নিজেরা শেয়ার কিনেছেন।
এর আগে গত বছর জুনে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নামে ডিএসইর আরেক ব্রোকারেজ হাউস আকস্মিক বন্ধ করে সটেক পড়েন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদ উল্লাহ।
শেয়ার ও টাকা আটকে যাওয়ায় তখনও বিপাকে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী।
ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় মতিঝিল থানায় এই হাউসের মালিকদের বিরুদ্ধে ডিএসই মামলা করেছে।
যোগাযোগ করা হলে মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক আরাফত শফিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি দুদকের নথিভুক্ত হওয়ায় আমরা এটা দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হয় ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে। এ জন্য একজন বিনিয়োগকারীকে কোনো হাউসে বেনিফিসিয়ারি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।
টাকাও জমা দিতে হয় হাউসের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। প্রতিটি হাউস এজন্য একটি গ্রাহক সমন্বিত অ্যাকাউন্ট খুলে সেটিতে গ্রাহকদের টাকা জমা রাখে।
গ্রাহকদের শেয়ার কেনাবেচার টাকা এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে।
মতিঝিলের ইস্পাহানি ভবনে অবস্থিত বানকো সিকিউরিটিজের ডিএসই ট্রেক নম্বর ৬৩।
এই হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের একজন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ।
“আমি এখন টাকা নিয়ে শঙ্কিত। আজকেও সেখানে গিয়েছিলাম। আমার মত অনেকের মাথায় হাত।”
হাসউটি অনেক দিন ধরে টাকা দিতে পারছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিএসই বিষয়গুলো জানত। বন্ধ করার আগে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার ছিল।
হতাশ ও ক্ষুব্ধ আবু আহমেদ বলেন, “আমি মনে করেছিলাম এবার ওদের টাকার জন্য চাপ দিব। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেল এখন টাকা কবে, কিভাবে পাব জানি না।
“শুধু শেয়ার থাকলে লিংক অ্যাকাইন্ট করে টাকা বের করা যেত কিন্তু নগদ টাকা কিভাবে বের করা যাবে।”
আরেক বিনিয়োগকারী কাজী আব্দুর রাজ্জাকও টাকা নিয়ে চিন্তার কথা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“কিভাবে এ ধরনের ঘটনা হল ডিএসই ও বিএসইসির বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।”
ডিএসইতে ২৪৬ জন ট্রেক হোল্ডার বা ব্রোকার আছেন। এদের মধ্যে ২৩৮ জন সক্রিয় রয়েছেন, অর্থাৎ লেনদেন করেন।
নতুন করে সম্প্রতি আরও ৩০ ট্রেক দিয়েছে দেশের প্রধান এই স্টক এক্সচেঞ্জ।