ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষের চাপে একরকম পিষ্টই রইল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এরপর মুহূর্তেই যেন বদলে গেল সব। প্রতিপক্ষের ভুলকে পুঁজি করে দলকে পথ দেখালেন পর্তুগিজ তারকা। শেষে গিয়ে মিলল আরেক গোল। ভিয়ারিয়ালকে হতাশায় ডুবিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে উঠল ম্যানচেস্টারের দলটি।
Published : 24 Nov 2021, 12:45 AM
স্প্যানিশ ক্লাবটির মাঠে মঙ্গলবার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে ইউনাইটেড। রোনালদোর গোলের পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জেডন স্যানচো।
ইউভেন্তুস ছেড়ে রোনালদো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফেরার পর থেকেই ইউনাইটেডের ম্যাচে যেন একটা দৃশ্য অতি পরিচিত হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। কোণঠাসা হয়ে পড়া কিংবা হারতে বসা দলকে শেষ দিকে এনে দিচ্ছেন জয়সূচক গোল, কখনও আবার তার নৈপুণ্যে হার এড়াচ্ছে ইউনাইটেড।
ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে প্রথম দেখায় পিছিয়ে পড়া ইউনাইটেড রোনালদোর শেষ মুহূর্তের গোলেই জিতেছিল। এরপর আতালান্তার বিপক্ষে প্রথমে দুই গোল খেয়ে বসা ইংলিশ দলটিকে আবারও শেষ দিকে গোল করে জিতিয়েছিলেন তিনি। এমনকি গত রাউন্ডেও ইতালিয়ান দলটির বিপক্ষে দুই দফায় পিছিয়ে পড়া দলকে দুবারই সমতায় ফেরান পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। শেষ গোলটি করেছিলেন যোগ করা সময়ে। এবার ছন্দহারা দলকে পথ দেখানোর কাজটি করলেন তিনি।
এরপর বেশ খানিকটা সময় ঢিমেতালে চলা ফুটবলে ২৭তম মিনিটে হঠাৎ ওঠা প্রতি-আক্রমণে এগিয়ে যেতে পারতে ভিয়ারিয়াল। তবে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মানু ত্রিগুয়েরোসের শট ঝাঁপিয়ে এক হাত দিয়ে ফিরিয়ে দেন দে হেয়া। প্রথমার্ধের শেষ পাঁচ মিনিটেও ভালো দুটি আক্রমণ করে স্প্যানিশ দলটি, তবে দে হেয়াকে আর ভাবাতে পারেনি তারা।
প্রথমার্ধে বিবর্ণ ইউনাইটেডের একটি প্রচেষ্টাই ছিল লক্ষ্যে, রোনালদোর সেই হেড ছিল গোলরক্ষক বরাবর। দ্বিতীয়ার্ধের অষ্টম মিনিটে তাদের আরেকটি প্রচেষ্টা থাকে লক্ষ্যে, তবে পরিণতি একই। ফ্রেদের শটে বল সরাসরি যায় গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলির হাতে।
৭১তম মিনিটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের প্রথম সত্যিকারের কোনো পরীক্ষা নিতে পারে ইউনাইটেড। রোনালদোর সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়ার ফাঁকে ডিফেন্ডার রাউল আলবিওলকে কাটিয়ে ডি-বক্সের আরও ভেতরে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান স্যানচো। তবে তার কোনাকুনি শট পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন রুলি।
এই সুযোগের পর আচমকাই যেন গতি ফিরে পায় ইউনাইটেড। সাত মিনিট পরই প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগে এগিয়ে যায় তারা। বল ছিল রুলির পায়ে, কোনো হুমকিই ছিল না। কিন্তু সতীর্থ এতিয়েনে কাপুর উদ্দেশ্যে দুর্বল পাস দিলেন তিনি। পাশে ফ্রেদের চ্যালেঞ্জে ঠিকমতো বল পায়ে নিতে পারলেন না কাপু। ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে ঠিকানায় বল পাঠালেন পর্তুগিজ তারকা।
ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটিতে চলতি আসরে পাঁচ ম্যাচেই জালের দেখা পেলেন রোনালদো, গোল হলো ৬টি। টুর্নামেন্টে সব মিলিয়ে রেকর্ড স্কোরারের গোল সংখ্যা বেড়ে হলো ১৪০টি।
৮৩তম মিনিটে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগও পান রোনালদো। তবে ওয়ান-অন-ওয়ানে গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে আলতো শট নিলেও দূরের পোস্ট ঘেঁষে বল চলে যায় বাইরে।
পাঁচ ম্যাচে তিন জয় ও এক ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ভিয়ারিয়াল।
নকআউট পর্বের টিকেট নিশ্চিত করার জন্য তো বটেই, পাশাপাশি ঘরোয়া লিগে একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সে বেকায়দা অবস্থায় পড়ে যাওয়া দলটির জন্য এই জয় কাজ করতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর টনিক হিসেবে। গত শনিবার ওয়াটফোর্ডের মাঠে হারের পর প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ সাত ম্যাচে পাঁচ পরাজয় ও এক ড্রয়ের দায় মাথায় নিয়ে ছাঁটাই হন কোচ উলে গুনার সুলশার।
তাদের পারফরম্যান্স মন ভরাতে না পারলেও অন্তর্বর্তীকালীন কোচ মাইকেল ক্যারিকের হাত ধরে কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা তো পেল তারা। এবার ব্যর্থতার চাদর ছেড়ে বেরিয়ে আসার পালা।