রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের ভিড়ও বাড়ছিলো; অস্থায়ী তাঁবুতে তাদের রান্নার আয়োজন ছিলো।
Published : 26 Nov 2022, 09:32 AM
পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কায় কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশস্থলে আগেভাগেই আসতে শুরু করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার রাতের মধ্যেই সমাবেশস্থল ভরে যায়। সেখানে আড্ডা, গান আর পিকনিক করে সময় কাটিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে নগরীর টাউন হল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে বসে নেতাকর্মীরা আড্ডা দিচ্ছেন; কেউ শুয়ে আছেন। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে স্লোগানের সুর। কোথাও কোথাও কর্মীদের জড়ো করে কথা বলছেন নেতারা। খিচুড়ি রান্না করে চলছে খাওয়া-দাওয়া।
কিছুক্ষণ পর পর পিকআপ ভ্যানে করে কর্মীদের জন্য খাবার আনা হচ্ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের ভিড়ও বাড়ছিলো। যারা অস্থায়ী তাঁবুতে অবস্থান করছেন তাদের জন্য সেখানেই রান্নার আয়োজন ছিলো।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। অনেককে সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। গণসমাবেশ উপলক্ষে এরই মধ্যে ৭২ ফুট দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ মঞ্চ তৈরির কাজ রাতেই প্রায় শেষ করেছেন ঢাকা থেকে আসা ডেকোরেটর কর্মীরা।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু বলেন, “শুক্রবার গভীর রাতের এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষ ভালো নেই। মানুষের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও সমাবেশে এসেছেন।”
কুমিল্লা জেলার (কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর ও মহানগর শাখা), চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পাঁচটি শাখা বিএনপির উদ্যোগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ হচ্ছে। এটি বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় গণসমাবেশ।
শনিবার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।
শনিবার সকাল ১০টার পরই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন দুপুরের পর। শেষ হবে বিকাল চারটার মধ্যে।
রাতে টাউন হল মাঠে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতো পরিবহন ধর্মঘটের শঙ্কায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার থেকে তারা আগেভাগেই থেকেই চলে এসেছেন কুমিল্লায়। তাদের বেশির ভাগই সমাবেশস্থলে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ উঠেছেন হোটেলে, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি।
শুক্রবার রাতে কুমিল্লা টাউন হল মাঠ পর্যবেক্ষণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত কুমিল্লা ক্লাবের বারান্দা থেকে সমাবেশস্থল দেখেন এবং শনিবারের সমাবেশ সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নির্দেশনা দেন বলে কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জানান।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমাবেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তুলে ধরেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার সন্ধ্যায় টাউন হল মাঠ এলেও বিপুল পরিমাণ নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে তিনি সামনে আসেননি। তবে দূর থেকে তিনি মাঠের পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আগামীকাল একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে বলে আশা করছেন।
তিনি আরও বলেন, “কুমিল্লায় আগত নেতা-কর্মীদের জন্য সমাবেশের মাঠসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে অস্থায়ী তাঁবুতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে অনেক নেতা নিজেদের মত করে কর্মীদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন। সমাবেশ সফল করতে তারা কষ্ট করছেন।”
কুমিল্লা সিটির করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “আমার নিজের নির্মাণাধীন ভবনের ৭৮টি ফ্ল্যাটে নেতা-কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি বুধবার রাত থেকেই নেতাকর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. খোকন মিয়া বলেন, “শুক্রবার বিকালে এসে টাউন হল মাঠে বসে আছি। এখন ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমাব। শনিবার সমাবেশ সফল করে বাড়ি ফিরবো।”
ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, “নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এই দাবিতে সমাবেশস্থলে এসে বসে আছি। এখানে এসে আমি আনন্দিত।”