ফরিদপুর শহর ঘেঁষা গ্রামীণ এলাকার কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠছে ইটভাটা।
Published : 17 Oct 2019, 11:46 AM
পদ্মা নদীর বালি ও কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ সহজলভ্য হওয়ায় সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় এক ডজনের বেশি ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলন পাল বলেন, ‘প্রভাবশালীদের’ সহায়তায় ইট-বালির ব্যবসায়ীরা পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে সারা বছর বালি তোলে। এছাড়া প্রতিবছর কৃষিজমিতে পলি জমে বলে ইটভাটার জন্য ‘টপ সয়েল’ এখানে সহজলভ্য।
এ ইউনিয়নের একটি গ্রাম আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গিতে ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমি ধ্বংস করে মাত্র দুইশ’ গজের মধ্যে পাশাপাশি তিনটি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।
এর মধ্যে চাঁন মিয়া ও লিয়াকত মাতুব্বরের দুইটা পুরনো ভাটার পাশাপাশি আরশাদ ব্যাপারী মালিকানাধীন ‘এবিবি ব্রিক’ নামে নতুন আরো একটি ইটের ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে এবিবি ভাটার মালিক আরশাদ ব্যাপারী বলেন, “আমাদের দুই পাশে দু’টি ভাটা থাকায় আমার জমিতে ফসল হচ্ছিল না।
“এলাকার লোকেরা সেখানে গরু ছাগল চড়াত। এ কারণে আমিও নিরুপায় হয়ে ইটভাটা দিয়েছি।”
গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে এর বিল পাশের সময় পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছিলেন,“এই আইন প্রণয়ন হলে কৃষির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ‘টপ সয়েল’ রক্ষাসহ ইটভাটাজনিত পরিবেশ দূষণ কমবে।”
আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গির স্থানীয় বাসিন্দা নিরু ফকির অভিযোগ করে বলেন, “অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে এসব ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।”
কৃষি জমি নষ্ট করে ভাটা তৈরি হোক চা না বলে জানান জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে এ প্রসঙ্গে বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে তাদের অনুমোতি দেয়?”
সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে ইটভাটা অটোমেশন করার সরকারি উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।”
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন অফিস খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলায় বৈধ ইট ভাটা রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে অটো ইটভটার সংখ্যা ১০টি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি জমি ও জনবসতিপূর্ণ জমিতে ইট ভাটার জন্য সাধারণত ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ম নেই।
“তবে অনেক ক্ষেত্রে স্ব-স্ব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে থাকে।”
বাস্তবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো ইটভাটাকে অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে যাচাই করলে কোনক্রমেই কৃষি জমিতে এসব ভাটা করার অনুমতি দিতে পারত না মনে করেন শেখ শাহেদ আলী নামে ডিগ্রিরচর এলাকার এক বাসিন্দা।
অতিদ্রুত এসব ইটভাটা অপসারণ করার দাবি জানিয়ে সিদ্দিক মিয়া নামের আরেক গ্রামবাসী বলেন, একের পর এক ইটের ভাটা গড়ে ওঠায় কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।