কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে কুড়িগ্রামের তিন পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার লোকজন।
Published : 28 Jul 2019, 07:11 PM
কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম পৌরসভাসহ জেলার নাগেশ্বরী ও উলিপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ১৪ জুলাই থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
রোববার কুড়িগ্রাম পৌরসভায় গিয়ে দেখা গেল, ভোকেশনাল মুন্সিপাড়ার নাজমুন নাহার তার নয় মাসের ছেলেকে নিয়ে পৌরসভা থেকে ফিরে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে ছেলেকে টিকা না দিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।”
সন্তানকে নির্দিষ্ট সময় টিকা দিতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
একই সমস্যার কথা জানালেন ওই পৌর এলাকায় সাবিত্রি রায়, মুসলিমা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, মোনালিসা, শাপলা বেগম ,আয়শা পারভীন।
তারা বলেন, ১৫দিন ধরে টিকা দেওয়ার জন্য পৌরসভায় এসে তারা ফিরে যাচ্ছেন। টিকা দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। পৌরবাসীদের অন্য কোথাও এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা পৌরসভায় পাঠায়।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকার ভেতরে ৪৩টি কেন্দ্রে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কার্যক্রম পরিচালনা করে পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু পৌরসভার কার্যক্রম বন্ থাকায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন তিন পৌরসভার কয়েক হাজার শিশু ও মা।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে কুড়িগ্রাম পৌরসভায় চলমান ইপিআই কার্যক্রম চালু রাখার জন্য পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে; একই সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, পৌরবাসীদের ট্যাক্সের টাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন হয়। অথচ সেই পৌরবাসীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়।
“শহরের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মশা নিধনের কোন ব্যবস্থা নেই। নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। এক কথায় পৌরবাসীদের এখন দুর্বিসহ জীবন। জনসার্থে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত।”
ওই এলাকার ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী মুসা বলেন, “ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছি। সিডিউল ক্রয় করে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দরপত্র দাখিল করতে পারছি না। এতে ঠিকাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম ‘সুজন’ এর সভাপতি খাইরুল আনাম বলেন, “কুড়িগ্রামে চলছে ভয়াবহ বন্যা ও বৃষ্টি। এর উপর আবার রাতে পৌরসভার সকল সড়কে বাতি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে।”
হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার সড়ক বাতি বন্ধ রয়েছে। আমরা পৌরসভাকে সড়কবাতিসহ বিভিন্ন কর দেই, সড়ক বাতি বন্ধ থাকবে কেন? বছর শেষে ঠিকই করের বিল দেবে পৌরসভা। যদি কর দেই আন্দোলনের নামে সেবা বন্ধ থাকবে কেন।”
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল বলেন, “পৌর এলাকা বড় কাঁচাবাজার জিয়া বাজার ও আদর্শ পৌরবাজারে জমে আছে ময়লার স্তূপ ও ময়লা পানি। দুর্গন্ধ যেন নাগরিকদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মোড় ও রাস্তার উপর পড়ে আছে ময়লা-আর্বজনা। এসব দেখার কেই নেই।”
জিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সফিকুল ইসলাম জানান, এই বাজারটি একমাত্র পাইকারী বাজার। ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে তা অপসারণ না করায় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তার উপর ময়লা জমে থাকায় পথচারী সহ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।
অপরদিকে পৌরসভার অধিকাংশ নাগরিকদের একমাত্র পানির ভরসা পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি। সে পানি নিয়েও চলছে লুকোচুরি। পৌরসভার বিভিন্ন পাড়ায় চলছে পানির সংকট।
খলিলগঞ্জের বাসিন্দা এরশাদুল হকবলেন, “এমনিতেই পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি যথাযথ ভাবে পাওয়া যায় না। তার উপর পৌরসভায় ধর্মঘট চলায় সাপ্লাইয়ের পানি পাওয়া যাচ্ছে না।”
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিল জানান,আন্দোলনের কারনে পৌরসভার নাগরিকরা সকল সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি ও তার পরিষদের কাউন্সিলররা পৌরসভায় এলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কাজ না করায় স্থবির হয়ে পড়েছে পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোশিয়েশন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপিত হাফিজুর রহমান বুলু জানান,কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে আমরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করছি। “আমাদের মূল দাবি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পেনশন প্রথা চালু এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা চালু করতে হবে।দাবি না মানা পর্যন্ত কুড়িগ্রাম পৌরসভাসহ জেলার নাগেশ্বরী ও উলিপুর পৌরসভার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”