খুলনা-কলকাতা ট্রেন চালুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যশোরে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলছে। যশোর থেকে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত এ অভিযান শুরু হয় গত বুধবার। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় পড়েছে নাভারণ থকে বেনাপোল পর্যন্ত।
Published : 11 Mar 2017, 01:04 PM
শার্শা অংশে রেলওয়ের এই জায়গায় অন্তত আড়াই হাজার বাড়িঘর ও দোকানপাট রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য আগে নোটিশ দিয়েও কাজ না হওয়ায় উচ্ছেদ শুরু করে রেলওয়ে।
দুদিন অভিযান চলার পর বৃহস্পতিবার তাদের আবার পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ এসব দখলদারদের মধ্যে নাভারণ রেল স্টেশন সংলগ্ন জমিতে হরিজন সম্প্রদায়ের (সুইপার) ২২টি পরিবারও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা রেলওয়ের এ জায়গায় ঘর করে বসবাস করে আসছে। প্রথম দুদিনের উচ্ছেদ অভিযানে ইতিমধ্যে পাঁচটি বাড়ি ভাঙা পড়েছে।
সাধারণ বাঙালিদের মতো ভাড়ায়ও সহজে তাদের ঘর মিলবে না। তাই তারা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এ অবস্থায় হরিজন সম্প্রদায়ের এ সদস্যরা তাদের সরকারি জমি না পাওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ না করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা রেলওয়ের ব্যাপার, তাই উপজেলা প্রশাসনের করার কিছু নেই। তবে তাদের আবেদনের বিষয়টি রেলওয়ের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইউএনও বলেন, ওরা খাসজমি বন্দোবস্ত চেয়ে আবেদন করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকার তো ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে কাজ করছে। এদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সময় লাগবে।
উপজেলা হরিজন কমিটির সভাপতি হিরালাল বাশফোর বলেন, শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘সুইপার’ হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের সবাই এই পল্লিতে বসবাস করেন।
“বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করলে যুবতী মেয়ে, বউ, বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের নিয়ে আমরা এখন করব কী, যাব কোথায়?”
বুরুজবাগান হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী বীনারানি বাশফোর বলেন, “একেতে আমরা হরিজন সম্প্রদায়ের লোক, সরকারের সহযোগিতায় লেখাপড়া শিখছিলাম। এবার উচ্ছেদ আতংকে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হতে চলেছে। আমরা বাঁচতে চাই, লেখাপড়া শিখতে চাই। সরকার আমাদের প্রতি সদয় হবে।”
একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দীপারানি বাশফোর, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রীতিরানি বাশফোর, হৃদয় বাশফোরসহ অনেক শিশুরই জম্ম এই হরিজন পল্লিতে। তারা বাবা-মায়ের পেশায় না গিয়ে পড়াশোনা করছে। দেখছে বড় হওয়ার স্বপ্ন। এখন আশ্রয়হীন হওয়ার আতংকে ভুগছে তারা।
“তাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতে হবে। তাদেরকে খাসজমি বন্দোবস্ত করার আগে উচ্ছেদ না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি।”
খুলনা-কলকাতা ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস-২’ চলাচলের উপযোগী করতে গত বুধবার রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখা অবৈধ ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বেনাপোল দিঘিরপাড় এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমদিন বুধবার বেনাপোল ও নাভারন রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয় বলে জানান শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।
“এর আগে তাদের মালামাল ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের কোনো কথায় তারা কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়েই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের বেনাপোল স্টেশন মাস্টার আজিজুর রহমান বলেন, খুলনা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ খুব দ্রুত চালু হবে তাই রেল স্টেশন এলাকার নিরাপত্তাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়ার কাজ চলছে।
উচ্ছেদ অভিযানে ছিলেন শার্শার ইউএনও আব্দুস সালাম, পাকশি রেলওয়ে বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট ইউনুস আলী, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী ও জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আলম।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ বেনাপোল এলাকায় এবং শার্শা থানা পুলিশ নাভারণ এলাকায় তাদেরকে সহযোগিতা করে।