দুদিনেও কাজে ফেরেননি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎকরা।
Published : 03 Mar 2017, 03:06 PM
এক রোগীর আত্মীয়কে মারধরের ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে সাজা দেওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে কাজ করছেন না তারা।
তবে ধর্মঘট করছেন কি না সে ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেননি এই মেডিকেলের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে এক জরুরি সভায় তাদের কাজে যোগ দিতে বলা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাসুদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির বিষয়টি আমাকে জানাননি। বিনা নোটিশে তারা কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
“চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না দেখান জন্য দুটি মনিটরিং টিম গঠর করা হয়েছে। বিকাল ৪টায় এ বিষয়ে জরুরি সভা আহবান করা হয়েছে।”
সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় চিকিৎসকরা কাজ করলেও শিক্ষানবিশ চিকৎসকরা কাজে যোগ দেননি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বিকাল ৪টায় সভায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাদের যোগদানের কথা বলা হলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
“এছাড়াও এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো কাগজ আমরা হাতে পাইনি। সেজন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া বা কথা বলা যাচ্ছে না।”
শনিবার সকাল ৯টায় আবার সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানান নির্মলেন্দু।
সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার খালিদ আব্বাস খান বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সকাল থেকেই হাসপাতালে আসেননি। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসার কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।”
এ ব্যাপারে সাজাপ্রাপ্ত চিকিৎসক শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি এমএ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তার অভিযোগ, তিনি ফ্যান বন্ধ করার জন্যি সুইচ খুঁজে না পেয়ে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে যান। এরপর আরেকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এসে তাকে মারধর করেন এবং অন্য একটি কক্ষে নিয়ে কান ধরে উঠবস করান।
মারধর ও কান ধরিয়ে উঠ বস করানোর ওই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসকদের নিয়ে সমালোচনা ওঠে। ওই ঘটনার পর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা করলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ওই কমিটি প্রতিবেদনে চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে চিহ্নিত করে ব্যরবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
এই প্রেক্ষাপটে ওই চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মেয়াদ শেষে এই চার শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে চারটি ভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আল মামুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, মো. আশিকুজ্জামান আসিফকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মো. কুতুবউদ্দিনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করলে তাদের পেশাগত সনদ বাতিল করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।