শীতের শেষে বসন্তের দিনগুলো চেরি ফোটার সময়। ছোট থেকে মাঝারী আকারের ঝাকরা চেরিগাছগুলো যখন ফুলে ফুলে শোভিত থাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। এই এক ফুল ফোটা থেকেই এক উৎসব!
Published : 18 Apr 2019, 05:57 PM
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একটা কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ছোট শহর পোটোম্যাকে কিছুদিন থাকা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষিকা ডক্টর হাসিনা আক্তারের বাড়িতে। এক বিকেলে তিনি নিয়ে গেলেন ওয়াশিংটন ডিসি'র চেরি ফোটার উৎসবে। পোটোম্যাক খুব সুন্দর জায়গা। শান্ত-নিরিবিলি এলাকায় সাজানো ছবির মতো বাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে যে রাস্তাগুলো চলে গেছে তার দু'পাশে এপ্রিলের শুরুর আবহাওয়ায় সারি সারি চেরি গাছ পুষ্পশোভিত হয়ে আছে। মনোরম দৃশ্য। তাও দেখি সবাই চেরি ফোটা দেখতে ওয়াশিংটন ডিসি যাচ্ছে! আগ্রহী দর্শনার্থীদের চাপে মূল শহরের বহুদূর থেকেই 'ট্রাফিক জ্যাম' লেগে গেছে। বুঝতে পারলাম, এটা শুধু চেরি ফুল দেখা নয়, এটা বিশেষ একধরনের উৎসব। ইংরেজিতে এরা বলে 'চেরি ব্লসম'।
তবে চেরি উৎসব সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বোধহয় জাপানে। তারা বলে ‘সাকুরা'। আমার জাপান-প্রবাসী বন্ধুদের কাছ থেকে সাকুরা-র অনেক গল্প শোনা। সেখানে এটা জাতীয় উৎসবের মতো। চীনেও এই সময়টাতে বিভিন্ন জায়গায় চেরি ফুটে থাকতে দেখা যায়। রাস্তার দুই ধারে কিংবা বিভিন্ন পার্কে অজস্র চেরি গাছ সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অপেক্ষা করে পথিক কিংবা ক্লান্ত অবসন্ন মানুষের মনে প্রশান্তি দেয়ার জন্য। চৈনিক ভাষায় চেরি মানে 'ইংহুয়া'। এছাড়াও কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ইরান এবং ইউরোপের বহু দেশেই চেরি ফোটার উৎসব হয়। সাধারণত দুই রকমের চেরি দেখা যায়। সাদা আর গোলাপি। তবে চেরির ‘স্পিসিস’ অনেকগুলো।
ওয়াশিংটন ডিসিতে চেরিফোটার উৎসবে গিয়ে আমার বেশ আরেকটা প্রাপ্তিও হয়েছিল। প্রায় দেড়যুগ পরে পুরনো বন্ধু শাহিনের সাথে দেখা। চেরির বাগানে দুই বন্ধু যখন হাত ধরে হাঁটছিলাম, বন্ধুর সহকর্মী পেছনে গুনগুন করে গাইছিলেন-
"পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।"
আমি বললাম, "বাহ! আপনি তো বেশ গান করেন!"
তার উত্তর, "আপনাদের দুই বন্ধুর জন্যই গাইলাম"।
চীনের রাস্তাঘাটে কিংবা পার্কে যখন চেরি ফুলগুলো ফুটে থাকতে দেখি, আমার মনে পড়ে বাংলাদেশের কথা। বড়বড় কৃষ্ণচূড়া কিংবা শিমুল গাছগুলো কি সুন্দর লাল রঙে সাজিয়ে রাখে প্রকৃতি। কিংবা বর্ষার মোহময়ী কদম গাছ। কি মনোরম সেসব দৃশ্য! আমি ভাবি, চীনা-জাপানিদের মতো আমরা সেরকম ফুলের সমাঝদার নই। তা নাহলে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল কিংবা কদম ফোটা আমাদের জনমনে তেমন প্রভাব ফেলেনা কেন?
লেখক: চীন প্রবাসী
ছবি কৃতজ্ঞতা: মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |