স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করে ‘জাতির মানহানি’ এবং ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ জন্মদিন পালনের দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা।
Published : 22 May 2018, 05:17 PM
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা ওই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এ নিয়ে মোট পাঁচ মামলায় হাই কোর্টে তার জামিন চাওয়া হল।
এর মধ্যে কুমিল্লা ও নড়াইলের দুই মামলায় তার জামিন আবেদন মঙ্গলবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে তোলা হলে কুমিল্লার এক মামলায় আংশিক শুনানি হয়।
বুধবার এ দুটি আবেদনের ওপর ফের শুনানি হবে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
নতুন দুই আবেদন
২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করায় ‘জাতির মানহানি’ এবং ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ জাতীয় শোক দিবস ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালে ঢাকায় দুটি মামলা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চের অনুমতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার জামিনের জন্য আবেদন জমা দেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতের কাছ থেকে এ বিষয়ে অনুমতি নেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এছাড়া ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও মাসুদ রানা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করার বিষয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার হাকিম আদালত।
এর মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তার মুক্তি আটকে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য মামলাতেও বিএনপি নেত্রীর জামিন করানোর উদ্যোগ নেন তার আইনজীবীরা। স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করার মামলায় গত ১২ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিন দেওয়ার আবেদন করা হয় হাকিম আদালতে।
ওই আবেদনের শুনানি কয়েক দফা পিছিয়ে যাওয়ার পর সর্বশেষ গত ১৭ মে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করে ৫ জুলাই আদেশের জন্য রাখে। এই পরিস্থিতিতে খালেদার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে আসেন।
অন্যদিকে ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে অন্য মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। গত ২৫ এপ্রিল একইভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
আদালত গত ১৭ মে শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দিয়ে ৫ জুলাই জামিন প্রশ্নে আদেশের দিন রাখে। এরপর খালেদার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে আসেন।
আইনজীবী মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের অনুমতি নিয়ে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদন দায়ের করেছি। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।”
কুমিল্লার এক মামলায় শুনানি
দুর্নীতি মামলায় জামিন হওয়ার পর গত ২০ মে হাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে কুমিল্লা ও নড়াইলের তিন মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
এর মধ্যে চৌদ্দগ্রামের একটি মামলা বিশেষ আইনে হওয়ায় ওই মামলায় ফৌজদারি আপিল করা হয়। তার সঙ্গেই খালেদার জামিন চাওয়া হয়। বুধবার ওই আবেদনের ওপর হাই কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা।
আর বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে কুমিল্লার এক মামলা এবং নড়াইলের একটি মানহানির হামলায় তার জামিন আবেদন মঙ্গলবার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য তোলা হয়।
এর মধ্যে কুমিল্লার নাশকতায় মামলায় এদিন খালেদার জামিন শুনানি শুরু করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ জে মোহাম্মদ আলীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনজীবীরা জানান, এদিন আংশিক শুনানির পর বিষয়টি বুধবার আবার শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। খন্দকার মাহবুব বুধবার আবারও শুনানি করবেন।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় আট যাত্রী নিহত হন। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান পরদিন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেন।
পুলিশ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর মধ্যে খালেদা ঢাকার দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যাওয়ায় কুমিল্লার মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত গত ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়নি এখনও।
এ অবস্থায় খালেদার আইনজীবীরা গত ২২ এপ্রিল কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুই মামলায় তার জামিনের আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য ৭ জুন তারিখ রাখেন। শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হলে ১৪ মে তা খারিজ করেন বিচারক।
আর নড়াইলের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি দায়ের করা হয় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করার অভিযোগে। নড়াইল জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকী ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের তলবে হাজির না হওয়ায় ২০১৬ সালের অগাস্টে এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। আইনজীবীরা এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করলে গত ৮ মে সে আবেদনের উপর শুননি হয়। কিন্তু শুনানির পর আদালত কোনো রকম আদেশ না দিয়ে ২৫ মে মামলার তারিখ রাখেন। এ কারণে খালেদার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে আসেন।