ফেইসবুকের সদ্য সাবেক কর্মকর্তা আঁখি দাসের সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যোগসাজশের অভিযোগ নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক মহলে এখন চলছে ব্যাপক শোরগোল।
Published : 29 Oct 2020, 06:45 PM
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ভারত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার নীতি নির্ধারক দলের প্রধান হিসেবে আঁখি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঘৃণ্য সব বক্তব্য উপেক্ষা করে বিজেপির প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন।
চলতি বছরের অগাস্টে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযোগটি আরও জোরাল হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, তেলেঙ্গানার বিজেপি নেতা টি রাজা সিংহের মতো ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতা এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা-নেত্রীদের ‘উস্কানিমূলক’ ও হিংসাত্মক মন্তব্য এবং পোস্ট ফেইসবুক থেকে সরানোর বিরোধী ছিলেন আঁখি।
আঁখি ওই সুপারিশকে পাত্তা না দিয়ে বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেইসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে।
টি রাজা অবশ্য শুরু থেকেই ফেইসবুকে তার যে অ্যাকাউন্ট থেকে ‘বিদ্বেষমূলক’ পোস্ট দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে সেটিকে ‘জাল’ বলে দাবি করে আসছিলেন।
চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ফেইসবুক তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়কের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়।
“ঘৃণা এবং হিংসায় উস্কানিমূলক পোস্ট আমাদের নীতির পরিপন্থী। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পোস্টগুলি মূল্যায়ন করে দেখেছি। সেগুলি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করছে। তাই আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” জানায় তারা।
কেবল ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উপেক্ষা নয়, ফেইসবুকের কর্তা হয়ে আঁখি ভারতে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনা এবং পরবর্তীতে তাদের প্রসারে ভূমিকা রেখেছিলেন বলেও বামপন্থি রাজনীতিকরা অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটে জেতার পরে উচ্ছ্বসিত আঁখি কর্মীদের লিখেছিলেন, “আমরা তার (মোদী) সোশাল মিডিয়ার প্রচার দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। বাকিটা ইতিহাস।”
দুই বছর আগে গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সোশাল মিডিয়ায় বিজেপির ব্যাপক প্রচারে আঁখির ভূমিকা ছিল বলে তার নিজের লেখা পোস্ট এবং ফেইসবুকে তার সহকর্মীদের কথাতেও উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
২০১১ সালে ফেইসবুকে যোগ দেওয়ার আগে এ বাঙালি নারী ছিলেন মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ার পাবলিক পলিসি, লিগাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের শীর্ষ পদে।
বহুজাতিক কোম্পানিতে দেড় দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের আঁখি ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে লোরেটো কলেজের এ ছাত্রী দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।
তার বোন রশ্মি দাসও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। রশ্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সভাপতি ছিলেন।
সৌম্যর বাবা পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্রোপাধ্যায়। অগাস্টে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ঘিরে হইচই শুরু হলে তৃণমূলের এ নেতা পুত্রবধূর পক্ষ নেন।
ওই মাসেই আবেশ তেওয়ারি নামের এক সাংবাদিকের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য প্রচার এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ছত্তিশগড়ে আঁখির বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এর পাল্টায় আঁখিও অফলাইন-অনলাইনে শারীরিক আক্রমণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আবেশসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেইসবুকের ভেতরে বাইরে ব্যাপক চাপের মুখে পড়তে হয় আঁখিকে। এ নিয়ে ভারতে সংসদীয় কমিটির কাছে হাজিরাও দিতে হয়েছিল তাকে।
আঁখির ‘বিজেপি যোগ’ নিয়ে তদন্ত করতে ফেইসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গের কাছে চিঠিও লেখে কংগ্রেস।
শেষ পর্যন্ত চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ফেইসবুক ছেড়ে দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার এ পলিসি হেড।
পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আঁখি এবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামবেন বলেও ভারতের রাজনৈতিক মহলে চলছে ব্যাপক কানাঘুষা।