মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানরা দেশে ফিরে গেলে তাদের ‘স্বাগত’ জানানো হবে।
Published : 06 Apr 2017, 11:30 AM
তবে রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালানোর অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাখাইন অঞ্চলের সমস্যা ও অশান্তির কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেখানে যা ঘটেছে, তাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলতে তার আপত্তি।
বহু বছর ধরে গৃহবন্দি থাকার পর রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছানো এই নেত্রী বিবিসির বিশেষ প্রতিনিধি ফারজেল কিয়েনকে বলেন, “আমি মনে করি না সেখানে কোনো ধরনের জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে। সেখানে যা হচ্ছে তাকে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বললে অনেক বেশি বলা হবে,”
সু চি বলেন, “সেখানে বহুমাত্রিক সংঘাত চলছে। এমনকি মুসলমানরাও অন্য মুসলিমানদের মারছে- যদি তারা মনে করে যে ওই মুসলমান কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করছে। আপনি যেভাবে বলছেন, সেভাবে সেখানে জাতিগত দমনাভিযান চলছে না; এ বিষয়টি আসলে দুই পক্ষের বিবাদ, আর আমরা সেই বিরোধ মেটাতে চাই।”
বিবিসি লিখেছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। আর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পর তাদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ হতে হয়।
মিয়ানমারে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে গত শতকের ৮০ এর দশক থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শিরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের ফিরিয়ে নিতে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমারের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে গতবছর অক্টোবরে চেকপোস্টে হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী পুলিশ একযোগে রোহিঙ্গাদের দমনে অভিযানে নামে। এরপর আরও অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, “তারা যদি ফিরে আসে, তবে তারা নিরাপত্তা পাবে। এখন সিদ্ধান্ত নেবে তারা। অনেকে এর মধ্যে ফিরেও এসেছে।
“আমরা তাদের স্বাগত জানাই, তারা ফিরে এলে আমরা স্বাগত জানাব।”
সমালোচনার জবাব
জাতিসংঘ গতমাসে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সামরিক বাহিনীর অভিযানের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিলেও মিয়ানমান সরকার শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এসব বিষয়ে ‘নীরব থাকা’য় অনেকেই সু চির সমালোচনা করেছেন। তাদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সামরিক জান্তার হাতে বন্দি অবস্থাতেও গণতন্ত্রের প্রশ্নে অনমনীয় থাকায় যে খ্যাতি সু চি অর্জন করেছিলেন, তা ম্লান হয়ে পড়ছে ওই ‘নীরবতার’ কারণে।
আন্তর্জাতিকভাবেও এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে বারবার সু চির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা সু চি বিবিসিকে বলেছেন, আগেও তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
“২০১৩ সাল থেকে এই প্রশ্ন করা হচ্ছে, যখন রাখাইনে শেষ দফা সমস্যা দেখা দেয়।… আসল কথা হচ্ছে, আমি তেমন কিছু বলিনি যা মানুষ শুনতে চায়; কিছু মানুষ চায় আমি এমন কিছু বলি যেখানে এক সম্প্রদায়ের উপর অন্য সম্প্রদায়কে দায়ী করা যায়।”
হামলার পর চালানো অভিযানে সেনাবাহিনীকে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
“তাদেরকে ধর্ষণ, লুটতরাজ ও নির্যাতনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। অভিযান চালানো, যুদ্ধ করার সুযোগ তাদের সংবিধানেই দেওয়া আছে। সামরিক বিষয়গুলো সেনাবাহিনীর হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনী যে কোনো অভিযান চালাতে পারে। সু চি বলছেন, তার সরকার সেনাবাহিনীর হাত থেকে এসব বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আশাবাদী।
সু চি দাবি করেন, তার দল গত বছরের মার্চে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য ছিল সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বিনিয়োগ এনে নতুন চাকরি সৃষ্টি করা। সেসব কাজ সরকার শুরু করেছে। এছাড়া দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি এবং অবাধ নির্বাচনের ব্যাবস্থা হয়েছে বলেও সু চির ভাষ্য।
এর বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে চলা সংঘাত কমিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাও সরকারের লক্ষ্যের মধ্যে আছে বলে জানান সু চি। রোহিঙ্গাদের মত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা শুরুর পরিকল্পনাও রয়েছে, সেনা শাসনামলে যাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে।