প্রতিদিন না খেলেও পিৎজা, কেক কিংবা পাস্তায় চিজ বা পনির খাওয়া হয়ে যায়।
Published : 02 Jun 2022, 04:46 PM
আর মুখরোচক খাবারগুলোর অধিকাংশই থাকে পনির দিয়ে ভরপুর।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘হোল সিটিস ফাউন্ডেশন’য়ের অন্তর্ভুক্ত হোল ফুডস’য়ের জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের পরিচালক ডা. আকুয়া উলব্রাইট, একবেলার খাবারে শক্ত পনিরের ক্ষেত্রে ১ আউন্স আর নরম পনিরের ক্ষেত্রে আধা কাপ পরিমাণ খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “পনিরের বেশিরভাগ ধরনই ক্যালরি, চর্বি আর সোডিয়াম’য়ে ভরা যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে আরও পাওয়া যায় ‘টায়রামিন’ নামক একটি উপাদান যা ডেকে আনে ‘মাইগ্রেইন’ ও মাথাব্যথা। বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া পেছনে পনিরের সরাসরি সম্পর্কে আজও নিশ্চিত না হলেও সুস্বাদু এই খাবারে গ্রহণে লাগাম টানাই ভালো।”
এখন পনির খাওয়া একেবারে যদি কেউ বাদ দিয়ে দেন তাহলে যেসব উপকার মিলবে
ত্বকের উন্নতি: পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে দিলে ত্বক হবে আরও মসৃণ ও উজ্জ্বল। এর কারণ হল দুগ্ধজাত খাবার শরীরে তেল উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়।
‘ইন্টারনাল মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ডা. ময়া বেলিঙ্গার বলেন, “পনির ত্বকের ‘সেবাম’য়ের উৎপাদন বাড়ায় যা ব্রণ ও লোপকূপ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলে ত্বক ভালো থাকবে।”
কমবে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেইন: বেলিঙ্গার বলেন, “খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত পনির থাকলে আপনি প্রায়ই মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। দেখা দিতে পারে ‘মাইগ্রেইন’য়ের সমস্যাও। এর পেছনে দায়ী মূলত ‘টায়রামিন’। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় আর তা মানুষের শরীরে অতিমাত্রায় প্রবেশ করলে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেইন’য়ের সমস্যা ডেকে আনে।”
কমবে ওজন: বেলিঙ্গার বলিন, “পনির খাওয়া না কমালে ওজন কমানোতে কখনই সফল হতে পারবেন না। কারণ এই খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি, চর্বি ও ক্যালরি থাকে।”
১০০ গ্রাম ‘চেডারে পনিরে থাকে প্রায় ৩৩ গ্রাম চর্বি।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে: ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইউসিএলএ মেডিকার সেন্টার’য়ের জ্যেষ্ঠ ডায়েটেসিয়ান ড. ডানা এলিস হান্স বলেন, “পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারে পাওয়া যায় ‘ক্যাসেইন’। মূলত দুধেই এই প্রোটিন উপাদানটি বিদ্যমান। ‘ক্যাসেইন’ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের টিউমারের বৃদ্ধিতে সহায়ক। আর ওই টিউমারগুলোই ‘প্রোস্টেট ক্যান্সার’ ও ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার’ ডেকে আনে। পনির যত খাবেন ততই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে। আর একে বাদ দিতে পারলে খুবই ভালো।”
পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা: মানুষ পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলে তা থেকে পরিবেশ উপকৃত হবে।
হান্স বলেন, “দুধ উৎপন্ন করতে প্রচুর পানি খরচ হয়, দুধের প্রায় তিন গুন। তাই দুধ তৈরি করতে গিয়ে অনেকবেশি প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়।”
আবার দুধ ও তা থেকে পনির তৈরি করতে অনেক স্থলভূমি ব্যবহার হয়। আর যে গবাদি পশু থেকে দুধ আসে তাদের নির্গমন করা মিথেন গ্যাসও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্রদাহ কমবে: যুক্তারাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ বেস বার্জার বলেন, “পনির এমন একটি দুগ্ধজাত খাবার যাতে আরও অনেক কিছু যোগ করা হয় তাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য। এগুলো শরীরে প্রদাহ করে। আর বর্তমান সময়ে দুগ্ধজাত খাবারের গুনগত মান আরও নিম্ন। ২০ বছর আগের দুগ্ধজাত খাবার আরও বেশি স্বাস্থ্যকর ছিল এবং তাতে কৃত্রিম উপাদানে মাত্রা অনেক কম ছিল। এতে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।”
পেট ফোলাভাব কমবে: হজমের সমস্য, পেটে ফোলাভাব যাদের হয় তাদের জন্য পনির বাদ দেওয়া হবে আশির্বাদ। অনেক দুগ্ধজাত খাবারেই পেটের গোলমাল দেখা দেয়, ডেকে আনে ‘ল্যাক্টোজ ইনটরেলেন্স’।
ব্যালেন্স ওয়ান সাপ্লিমেন্টস’য়ের পুষ্টিবিদ ট্রিস্ট বেস্ট বলেন, “পেট ফোলাভাব দুটি কারণে হতে পারে, শরীরে দুধকে ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় ‘এনজাইম’ থাকে না কিংবা তাতে ‘অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন’ হচ্ছে। চিকিসৎকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক কারণটা জেনে নেওয়া জরুরি।”
আরও পড়ুন