‘খোক মোক’-মায়ানমারের ঐতিহ্যবাহী এক মিহি চালের পিঠার নাম, ভেতরে তরল গুড়। পাতলা ছোট গোল রুমালের মতো অনেকটা দেখতে পিঠাটি একবারেই সহজে গিলে ফেলা যায়। মায়ানমারের শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ দেখার পাশাপাশি ‘রয়্যাল কারাউইক প্যালেস’ বসে রাতের খাবার সেরে ওই পিঠা উপভোগ করা সত্যিই অতুলনীয়।
Published : 29 Feb 2016, 01:46 PM
যারা অল্প কদিনের জন্য পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে একটু নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানোর কথা ভাবেন তারা বাংলাদেশ থেকে প্লেনে করে মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন মায়ানমার।
দেশটি নিয়ে অনেকের কৌতুহল থাকলেও কম পরিচিত মানুষই পাবেন যারা ওই দেশটিতে গিয়েছেন।
মায়ানমারের রাজধানীর নাম ইয়াংগুন। যার অর্থ শক্রুর বিনাশ।
ছিমছাম শহরটিতে গেলে দেখা যাবে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর জাদুঘর, মায়ানমারের প্রসিদ্ধ স্যে ডাগোন প্যাগোডা (Shwedagon), জেম মিউজিয়াম অ্যান্ড জেমস মার্ট, জাহাজের আদলে তৈরি ‘রয়্যাল কারাউইক হল’। যেখানে রাতের খাবার খেতে খেতে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গীত উপভোগ করা যায়।
দুপুরে সেখানকার পাই ডং স্যু ইয়েক থা (হালপিন) রোড ও মানায়ারি রোডের খাবার রেস্তোরাঁ ‘পানডোমার রেষ্টুরেন্ট (Pandomar Restaurant)’ পাওয়া যাবে বাংলাদেশের মতোই ভাত, মাছের তরকারি, মুরগির তরকারি ও সবজির হরেক রকম পদ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এখন মায়ানমারে বেড়াতে যাচ্ছেন বলে তারা দাবি করছেন।
মায়ানমারের ইয়াংগুনে দীর্ঘ সময় ট্যুরিস্ট গাইডের দায়িত্ব পালন করেন জিন মার অং।
অং বলেন, “আগে ইয়াংগুনে জার্মানরা বেশি আসতো। তাই গাইড হিসেবে কাজ করতে গিয়ে জার্মান ও ফ্রান্সের ভাষা শিখেছিলাম। এখন অনেক ইংরেজী ভাষাভাষী পর্যটক আসছে বলে ইংরেজীও আয়ত্তে এনেছি।”
সম্রাট জাফর ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর ৮৯ বছর বয়সে মারা যান। বৃটিশ সরকার তাকে গোপনীয়তায় সমাহিত করেছিলেন। ১৯৯১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাফর শাহ মেমোরিয়ালের কনস্ট্রাকশন কাজ চলার সময় তার মরদেহ আবিষ্কার হয়েছিল।
সমাধিতে মুসলামান ধর্মাবলম্বীরা গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ওই মসজিদে থাকা লোকেরা শাহ জাফরকে সুফি দরবেশ বা সুফি সাধক বলেও মানেন। বাদশাকে তারা মনেপ্রাণে ভালোবেসে তার স্মৃতি আঁকড়ে আছেন।
মায়ানমারের আরেক দর্শনীয় নিদর্শন ‘স্যে ডাগোন প্যাগোডা (Shwedagon)। প্যাগোডার কাছাকাছি প্রবেশ করতেই জুতা মোজা খোলা শুরু করতে হয়। কারণ, সেখানে জুতা কিংবা মোজা পরে প্রবেশের অনুমতি নেই।
স্যে ডাগোন প্যাগোডাটির উচ্চতা ৩২৬ফিট। সেটি ১১৪ একর জমির উপর তৈরি। প্যাগোডার উপরের অংশের অধিকাংশই গোল্ড প্লেটেড। প্যাগোডার নিচে রয়েছে বুদ্ধের ছোট বড় বহু মূর্তি।
তারদিকে সোনালি রংয়ের এক রাজকীয় আবরণ যেন প্যাগোডাকে ঘিরে রেখেছে। বুদ্ধের মূর্তির চারদিকে লাল-নীল আলো জ্বলছে।
প্যাগোডার চারদিকে মানুষের ঢল। এত্তগুলো মানুষ এখানে তারপরও কেমন নীরবতা, একটা কেমন পবিত্র পরিবেশ।
শান্তভাবে অনেকে ছবি তুলছে, কেউ বুদ্ধের মূর্তির পাশে বসে আছেন কেউবা বুদ্ধের সামনে বসে তাকে প্রাণভরে প্রণাম করছেন। সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন মানুষ।
এই প্যাগোডাতে আসা বেনজিয়ামের নাগরিক রিগাইন আজরিভ জানালেন, দুই সন্তান লিও ও চারলটিকে নিয়ে ভিয়েতনাম থেকে চায়না নতুন বছর উপলক্ষ্যে সন্তানদের স্কুল ছুটি থাকায় তারা স্বপরিবারে বেড়াতে এসেছেন।
‘রয়্যাল কারাউইক হল’ বিরাট একটা কৃত্রিম জাহাজের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। সোনালি আলো ঝলমলে প্যালেসের চারদিকে জল টলমল করে। জলের ধারে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে বসে নীরবে কথা সেরে ফেলতে পারেন সহজে একান্তে।
হলটায় যেখানে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে সেটি অনেকটা বাংলাদেশের কোনো বড় রেস্টুরেন্টের হল রুমের মতো।
চারদিকে ছোট বড় টেবিলের ঠিক সামনে রয়েছে মঞ্চ। সেখানে মায়ারমারের ঐতিহ্যবাহী গান ও নাচ পরিবেশনে ব্যস্ত থাকেন শিল্পীরা। দর্শকরা খাবারের পাশাপাশি অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
খাবারের মেন্যুতে সেখানকার স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি ভারতীয় ও ইউরোপীয় খাবারও পাওয়া যাবে।
শিল্পীদের ওই পারফরমেন্স দেখতে হলটিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে টুরিস্ট হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সুইন বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল(৬৫) ও তার স্ত্রী ভারজেনিয়া (৬০)।
মাইকেল বলেন, “দুই সপ্তাহের জন্য ঘুরে বেড়াতে স্ত্রী নিয়ে মায়ারমার এসেছি।”
তাদের খাবার টেবিল থেকে বেশ দূরে ১০/১২ জন ফ্রান্সের নাগরিক হাসি আর আড্ডায় মেতেছিলেন।
র্য়্যা ল হলের পারফরমেন্স দেখে মনে হচ্ছিল সেটি পৌরাণিক গল্প নির্ভর। প্রেম, বাধা, যুদ্ধ ও অবশেষে পরিণতি ওই বৈচিত্র্যময় পারফরমেন্সগুলোরও বৈশিষ্ট্য।
মায়ানমারে থাকার জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোটেল। শহরে ঘুরে বেড়ানোর সময় রাস্তার পাশে দেখা যাবে হরেক রকমের গাছ। মাঝে মধ্যে কিছুটা যানজটে পড়ে গাড়ি। ওই সময় রাস্তার পাশে ‘থানাকা’ নামের গাছটি দেখা যায়। ওই দেশের আসবাবপত্র তৈরির জন্য সেটি সুপ্রসিদ্ধ।
খনিজ সম্পদ সম্পৃদ্ধ দেশ মায়ানমারে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে জেম মিউজিয়াম অ্যান্ড জেমস মার্ট।
মিউজিয়ামে প্রবেশের পর প্রত্যেক দর্শনার্থীর মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা সেখানকার কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।
একই ভবনের জেমস মার্টে গিয়ে দেখা যাবে হরেক রকমের পাথরের অলংকার। অনেকে মুক্তার মালা কেনেন, কেউবা কেনেন নীলা, পান্নার অলংকার। কেউবা কেবল দরদামও করেন।।
মিউজিয়ামের কর্মকর্তা মালেয়া (৪৫) জানালেন, মায়ানমারে প্রচুর খনিজ সম্পদ আছে। হরেক রকম পাথর আর তা দিয়ে তৈরি অলংকার তৈরিতে এই দেশের পরিচিতি আছে। প্রতিদিন এই মিউজিয়ামে শতাধিক বিদেশি পর্যটক আসছেন।
দর্শনার্থীদের ৯০ ভাগই ফ্রান্স থেকে আসেন। এছাড়াও ইতালি, জার্মানরাও এখন এই দেশে আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়াতে আসছেন। তাছাড়া বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের পর্যটকরাও ভিড় করেন এই জাদুঘরে বলেও আশা প্রকাশ মালেয়া।
মায়ানমারের বেড়াতে যাওয়ার খরচাপাতি আর বিভিন্ন তথ্যে জন্য যোগাযোগ করতে এইসব ইমেইল এবং ওয়েবসাইটে।
Karaweik Palace এর email: [email protected]। Shwedagon Pagoda email: [email protected], এবং novoholidays