তুলতুলে নরম পশমী কোমল প্রাণীটি। দেখলেই সে কী আদর!
Published : 19 May 2020, 11:09 AM
আকারে কাঠবিড়ালীর অর্ধেক। লেজটা টেনেটুনে চার কি সাত মিলিমিটার হবে। মাথা আর পুরো দেহ মিলে সাত-আট ইঞ্চি। ওজন একশ পঁচাশি গ্রাম মাত্র। রং লালচে বাদামি। কিছুটা ছাই রঙের মিশেল আছে ওতে। ঘন রোমের এই আবরণ প্রাণীটার আকৃতিকে বিশাল করে তুলেছে।
মজার বাপার কি জানো? খিদে পেলে উদরপূর্তির জন্য কোনরকম বাছবিচারের ধার ধারে না ওরা। যা পায় গপাগপ খায়। পোকা-মাকড়ে যেমন অরুচি নেই, তেমনি কচি লতা-পাতা ফলমূল পেলেও কিছু যায় আসে না। পাখি বা কীটপতঙ্গের ডিম পেলে তো কথাই নেই। চমৎকার জমে ওঠে ভোজ।
বিচিত্র এই প্রাণীটির নাম ‘স্লেন্ডার লরিস’। লাজুক আর নিঃসঙ্গচারী বেড়াল জাতীয় এই প্রাণীর নিবাস চীন-ভারতের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপদ্বীপ। ভিয়েতনাম, লাউস থেকে কম্পুচিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে শ্রীলংকার বৃষ্টিবহুল বনাঞ্চলে দেখা মেলে ওদের।
লরিসের বৈজ্ঞানিক নাম ‘লরিস টারডিগ্রেডাস’। এটি তার জাত ভাই অন্যান্য বিড়ালের মতোই কৌতূহলী স্বভাবের। পায়ের পাতা আর আঙুল মানুষের হাতের মতো। শক্তভাবে ধরে রাখতে পারে গাছের মগডাল। পাতার আড়ালে লুকিয়ে এক হাতে ডাল ধরে রবারের মতো ঝুলে অন্য হাতে পোকা-মাকড় শিকারে ওস্তাদ ওরা। রহস্যময় অদৃশ্য জীবন লরিসের। রাতের আঁধারে গহীন জঙ্গলে ধীরস্থির চলাফেরার কৌশল দেখলে সত্যি অবাক হতে হয়। শিকারের সময় এত সতর্ক চলাফেরা করে যে ওদের উপস্থিতি বোঝে কার সাধ্য! এই আছে এই নেই। চোখের পলকে কুয়াশার মতো মিলিয়ে যায়।
অবশ্য ভয় পেলে সচকিত হয়ে ওঠে। বিপদ না কাটা পর্যন্ত পাথরের মূর্তির মতো ঠায় বসে থাকে। বিপদ কেটে গেলে দে ছুট! গহীন জঙ্গলের মগডালে ওদের খোঁজে বের করে হামলা করার আগ্রহ অবশ্য অন্য প্রাণীদের তেমন একটা নেই। তবুও কখনও যদি শত্রুর মুখোমুখি হতেই হয়, তখন আত্মরক্ষার্থে গর্জে ওঠে লরিস। অপলক তীক্ষ্মভাবে তাকায়। তারপর শত্রুর মুখের দিকে তাক করে, পিচিক করে ছুড়ে দেয় প্রস্রাব। প্রস্রাবের বিশ্রি দুর্গন্ধে শত্রু তখন বাপ বাপ করে পালিয়ে বাঁচে।
প্রাণীবিজ্ঞানীরা জানান, লরিস বড়জোর পনেরো বছর বাঁচে। দশমাস বয়সে এরা বাচ্চা দেয়। এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে এক থেকে দুটো বাচ্চা হয়। এসময় ওরা গাছের কোটরে আশ্রয় নেয়। জন্মের পর শিশু লরিস মায়ের পশমের আড়লে লুকোয়। মা তখন বাচ্চা নিয়েই শিকারে বেরোয়।
বন-জঙ্গলে এখন কতগুলো লরিস আছে? পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে এই প্রাণী এখন বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে। ‘ডিউক প্রাইমেট সেন্টারের’ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জেরান প্রত্যন্ত জঙ্গল থেকে এক জোড়া লরিস এনে নিরাপদ আবাস অঞ্চল গড়ে তোলেন। এখন দশটি বাচ্চাসহ মোট বারোটি লরিস রয়েছে সেই অভয়ারণ্যে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে ওরা। রহস্যময় এই প্রাণীর স্বভাব তো এমনই।
লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শেখ আনোয়ারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |