মার্চের মাঝামাঝি রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার যে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল, এক মাসেও তার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
Published : 12 Apr 2022, 08:18 PM
ঢাকার আইসিডিডিআর,বি কলেরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গত তিন দিনে তাদের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তারপরও প্রতিদিন ১২ শর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে ডায়রিয়া নিয়ে আসা এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে আইসিডিডিআর,বির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।
বিশেষায়িত এ হাসপাতালের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত মার্চ মাসে সব মিলিয়ে সেখানে ৩০ হাজার ৩৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে যান মাসের শেষ দুই সপ্তাহে।
আর গত ১ এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বিতে ১৪ হাজার ২৬২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৯৬ জনের বেশি রোগী।
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের বাসিন্দা মোমিন এবং তার মা জুলেখা দুজনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মোমন জানান, সোমবার ভোররাত থেকে তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সারেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে তার মায়েও পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়।
“মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছিল। অনেক বমি করছে। এজন্য হাসপাতালে আইসা পড়ছি।”
ঢাকার নতুন বাজার এলাকার ১২ বছর বয়সী তোফাজ্জলকে নিয়ে এসেছেন তার মা রিনা বেগম। রিনা জানান, সোমবার হাসপাতালে ভর্তির পর মঙ্গলবার সকালে ছাড়া পেয়েছিলেন। তবে বাসায় যাওয়ার পর আবার শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। সে কারণে আবার তাদের হাসপাতালে আসতে হয়েছে।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত কিছু রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী নাজমা বেগমও তেমনই একজন।
আবদুল কুদ্দুস বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে তিনি এসেছেন আইসিডিডিআরবিতে।
“ইফতার করার পর থেকেই তার পাতলা শুরু হয়েছে। রাতে অবস্থা খারাপ হলে নিয়া আসছি। অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ায় রাতেই আইসিইউতে দিছে। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো।”
আইসিডিডিআর,বির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত তিন দিনে রোগী কিছুটা কম আসছে।
“এটা চৌদ্দশর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, কিছুটা কমেছে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ছয় থেকে আট সপ্তাহ থাকে। এ পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চলতে পারে।”
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গুরুতর অবস্থায় এক তরুণকে নিয়ে আসা হয়। আইসিডিডিআর,বির জরুরি বিভাগে আনার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত নিয়ে যান হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সেখানেই দুপুর আড়াইটার দিকে মৃত্যু হয় ওই তরুণের। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানায়নি আইসিডিডিআর,বি।
ডা. বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসপাতালে আনার পর ওই রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছিল।
“আমরা তাকে প্রাথমিক সিপিআর দিয়ে আইসিইউতে নিয়ে গিয়েছি পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। সে আসার পর ১৪ মিনিটে আমরা তাকে ৬০০ মিলি লিটার স্যালাইন দিয়েছি। কাজেই হাইপোভলেমিক শকের সম্ভাবনা আমরা দেখি না। তার যে অবস্থা তাতে আমাদের মনে হচ্ছে কার্ডিওজেনিক শক।”
এই চিকিৎসক বলেন, একটানা পাতলা পায়খানা হতে থাকলে শরীরে পানি কমে যায়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে রক্তও কমে যায়। রক্তের পরিমাণ কমে গেলে রক্তের যথেষ্ট প্রবাহ থাকে না। সারা শরীরে, মস্তিষ্কে রক্ত না গেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাবে, শকে চলে যাবে। এটাকে হাইপোভলেমিক শক বলে।
“এজন্য ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে আনতে হবে অথবা বাড়িতে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।”