ডায়রিয়ার প্রকোপ: বাইরের খাবার ও পানি পানেই আক্রান্ত বেশি
ওবায়দুর মাসুম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 31 Mar 2022 01:16 AM BdST Updated: 31 Mar 2022 01:19 AM BdST
-
ডায়রিয়া রোগী সামলাতে হিমশিম অবস্থা আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের।
-
মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে এবার ডায়রিয়া রোগী অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
-
মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা।
রাস্তার পাশের দোকান থেকে সোমবার ছোলা, বুট আর ঝালমুড়ি কিনে খেয়েছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলী আজগর। এরপর রাত থেকেই পাতলা পায়খানা শুরু হয় তার। মঙ্গলবার ভোরে তাকে মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা।
আলী আজগরের মেয়ে নিপার ধারণা, ঝালমুড়ি খাওয়াই তার বাবার অসুস্থতার কারণ।
“আমরা বাসায় সবসময় পানি ফুটিয়ে খাই। বাবার দোকানেও পানির ফিল্টার আছে। বুট-মুড়ি খাওয়ার পরই বাবার এই অবস্থা হয়েছে।”
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে বুধবার সকালে আনা হয় মোহাম্মদপুরের পাশের শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা জিয়া মোল্লা। জলবসন্ত হওয়ার পর বাসায় ছিলেন তিনি। ফলে বাইরের খাবার খাওয়া হয় না তার। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাত থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
পানি ফুটিয়ে পান করেন না জানিয়ে জিয়া বলেন, “বউ কাজে চইলা যায়, এ কারণে বেশিরভাগ সময় পানি ফুটানো হয় না। আমি ট্যাপের পানিই খাই। পানি থেকেই হইল কি না বুঝতে পারছি না।”
এবার গরম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। সে কারণে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইসিডিডিআর,বি) রোগীর সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে।
আইসিডিডিআর,বির তথ্যে দেখা গেছে, গত সোমবার ১২১৬, মঙ্গলবার ১২৭২, বুধবার ১২৩৩, বৃহস্পতিবার ১১৭৬, শুক্রবার ১১৩৮, শনিবার ১২৪৫, রোববার ১২৩০ জন, সোমবার ১৩৩৪, মঙ্গলবার ১৩১৭ জন রোগী ভর্তি হন। বুধবার বেলা ৪টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয় ৭৭০ জন।
গত নয় দিনে ১১ হাজার ১৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২৪০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বিতে এক সপ্তাহে ৮৫১০ ডায়রিয়া রোগী
ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে আইসিডিডিআর,বির পরামর্শ
গরমের শুরুতে বরাবরই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে পানির চাহিদা বেড়ে যায়, বিপরীতে বিশুদ্ধ পানি সব সময় পাওয়া যায় না বলে পিপাসার্ত মানুষ দূষিত পানি পান করেন। ফলে পানিবাহিত এই রোগে এই সময়ে আক্রান্ত হয় বেশি।
তবে এবারের মতো একসঙ্গে এত বেশি রোগী আগে দেখা যায়নি বলে আইসিডিডিআর,বি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোগী সামলাতে বাইরে তাঁবু টানিয়েও দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
বুধবার আইডিডিআর,বিতে আসা অন্তত ১৫ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই বাইরের খাবার খেয়েছেন। বাসার বাইরের খাবার খান না, পানি পান করেন না, তারপরও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।
তাদেরই একজন যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগের বাসিন্দা মো. মানিক মৃধা। সোমবার রাতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন আইসিডিডিআর,বিতে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মঙ্গলবার রাত থেকে আবার পাতলা পায়খানা, বমি শুরু হয় তার। সঙ্গে খিঁচুনিও হয়।
“মনে হইতেছিল মারা যামু। অবস্থা খারাপ দেইখা রাইত একটার দিকে হাসপাতালে নিয়া আসছে,” বলেন তিনি।
কী থেকে জীবাণু সংক্রমণ হয়েছিল বলে মনে করেন- জানতে চাইলে মানিক বলেন, “সোমবার দুপুরের দিকে মালিবাগের একটা হোটেলে তেহারি খাইছিলাম। ওইদিন বিকাল থেকেই শুরু।”
একই রকম অভিজ্ঞতা মুগদার বাসিন্দা ইমরান হোসেনের। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁ থেকে মোরগ পোলাও এনে খেয়েছিলেন।
ইমরান বলেন, “আমরা ওয়াসার পাম্প থেকে সরাসরি পানি নিয়া আসি। সেই পানি খুবই ভালো মানের, আমরা সবসময় খাই। মোরগ পোলাও খাওয়ার পর বিকাল থেকেই প্যাটে গ্যাস হচ্ছিল। রাত ১টার পরে প্রচণ্ড পাতলা পায়খানা আর বমি শুরু হয়।”

মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে এবার ডায়রিয়া রোগী অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
শনির আখড়ার রিকশাচালক বশির আহমেদ ভর্তি হয়েছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বেশিরভাগ সময় বাইরেই খাওয়া-দাওয়া সারতে হয় তাকে।
“বাইরে নাস্তা করি, দুপুরে খাই। আর পানি তো বাইরেই খাইতে হয়। হেরা ভালো পানি দেয় না খারাপ পানি দেয় বুঝার তো কোনো সুযোগ নাই,” বলেন বশির।
রায়েরবাগের চা দোকানি ইব্রাহিম খলিলের ধারণা, পানি থেকেই তিনি ডায়রিয়া বাঁধিয়েছেন।
“বাড়িতে টিউবওয়েলের পানি ফুটাইয়া খাই। আর দোকানে থাকার সময় কলা-রুটি খাওয়ার পরে জারের পানি খাই। ওই পানির কারণেই হয়ত ডায়রিয়া হইছে।”
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডের একটি মাদ্রাসার ছাত্র শিব্বির আহমেদ আবার বুঝতে পারছেন না, কী কারণে তার ডায়রিয়া হয়েছে।
“আমি বাইরের খাবার কখনোই খাই না। আমাদের মাদ্রাসায় একসঙ্গে সবার রান্না হয়, সেখানেই খাই। আমাদের টিউবওয়েলের পানি আমরা সবাই খাই। খাবার ও পানি দূষিত হলে সবার ডায়রিয়া হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হল খালি আমার।”
ঢাকায় এখন যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত্ হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই দূষিত পানি ও বাসি খাবারের কারণে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু পানিকে দায়ী করলেও হবে না। ওয়াসার পানি খারাপ হলেও ভালোভাবে ফুটালে তা জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।”
বাইরের বিশেষ করে খোলা খাবার একেবারে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা।
আইসিডিডিআর,বির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই বাইরের খাবার বা পানীয় পান করছে অথবা অনিরাপদ পানি পান করছে। ঘর তৈরি খাবার খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও তা সংখ্যায় কম।
“ঘরের খাবার গ্রহণে করলে ডায়রিয়া কম হয় বলে আমার ধারণা। ঘরে একসঙ্গে তিন চারজনের জন্য রান্না করে। আর মায়েরা রান্নার বিষয়ে কেয়ারলেস হয় না। এজন্য আমরা সবসময় বলি বাইরে যে কোনো ধরনের খাবার পরিহার করতে।”
পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার জন্য মূলত দায়ী কিছু ব্যাকটেরিয়া।
ডা. বাহারুল বলেন, গরমের সময় সিগেলা, ই কোলাই, কলেরা (ভিব্রিও কলেরি) এবং শীতকালে রোটাভাইরাসের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়।
“পানিবাহিত এসব জীবাণু পানি ছাড়াও পচা-বাসি খাবারে জন্মে অথবা ছড়ায়,” বলেন তিনি।
জীবাণুটি কীভাবে ছড়ায় তার উদাহরণ দিতে গিয়ে ডা. বাহারুল বলেন, “একটা যদি কোনোভাবে পড়ে পচা-বাসি খাবারে, সে রেপ্লিকেট করে। এটা থেকে চারটা, চারটা থেকে ১৬টা। গরম খাবারে এই জীবাণু পড়লেও সে তেমন ছড়াতে পারে না।”
ডায়রিয়ার জীবাণু আছে, এমন পানি দিয়ে তৈরি করা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হয়।তাই নিরাপদ পানি ব্যবহারের উপরই বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন বেশি।
ঢাকা শহরে পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দাবি করছেন, তাদের পানিতে ডায়রিয়া বা কলেরার কোনো জীবাণু নেই।
বিভিন্ন স্থানে ওয়াসার লাইনেও দূষিত পানি পাওয়ার যে অভিযোগ আসছে, তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, ওয়াসার পানিতে কলেরার জীবাণু ছিল না, নাইও। গত এক মাস বা দুই মাস ধরে আমাদের পানি সরবরাহে কোনো ব্যত্যয় হয় নাই। ওয়াসার পানির মান যা ছিল, তাই আছে।”
-
আনিসের আত্মহত্যা: হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
-
বাড্ডায় কভার্ডভ্যান চাপায় দুজনের মৃত্যু
-
রাজধানীতে গ্যাসের আগুনে মা-ছেলে দগ্ধ
-
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু দুই যুগেও হত না: তাজুল
-
সিলেটের বন্যার ক্ষতি নিজের জীবদ্দশায় পূরণ না হওয়ার শঙ্কা পরিকল্পনামন্ত্রীর
-
ঢাকায় কলেরার টিকা পেল ২৩ লাখের বেশি মানুষ
-
সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘র্যাগ ডে’ বন্ধের নির্দেশনা ইউজিসির
-
ই-অরেঞ্জের প্রতারণা: সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
-
গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা: হেনোলাক্স গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
-
বাড্ডায় কভার্ডভ্যান চাপায় দুজনের মৃত্যু
-
রাজধানীতে গ্যাসের আগুনে মা-ছেলে দগ্ধ
-
নিজের গায়ে আগুন দেওয়া গাজী আনিসকে বাঁচানো গেল না
-
বন্যায় বসতঘর পরিণত বীজতলায়, বছরের খোরাকি হাঁসের আধার
-
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু দুই যুগেও হত না: তাজুল
সর্বাধিক পঠিত
- দিনে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কয়েকবার
- নিজের গায়ে আগুন দেওয়া গাজী আনিসকে বাঁচানো গেল না
- বেয়ারস্টো-রুটের ব্যাটে রেকর্ড গড়ার পথে ইংল্যান্ড
- চেলসি থেকে বার্সেলোনায় ক্রিস্টেনসেন
- মেডেন উইকেটের পর যে কারণে বোলিং পেলেন না মোসাদ্দেক
- লুহানস্কের পতনের পর এখন কোন পথে এগুবে রাশিয়া?
- বুয়েটের পর ঢাবিতেও প্রথম নটর ডেমের আসীর
- বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই, এবার ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার
- ম্যাচ হেরে মাহমুদউল্লাহর যত আক্ষেপ
- ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে মন্তব্য: স্কুল শিক্ষকের ৮ বছরের কারাদণ্ড