চট্টগ্রামে শুরু গণসঙ্গীত উৎসব, সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে বার্তা

বৈষম্য মুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে গণসঙ্গীত শক্তি যোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্ত মঞ্চে চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ এই স্লোগান নিয়ে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব।

জাতীয় সঙ্গীত ও উৎসব সঙ্গীত ‘আমারই দেশ সব মানুষের’ গানের মধ্যে দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় ওডিসি অ্যান্ড ট্যাগোর ডান্স মুভমেন্টের শিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন।

এরপর আলোচনা পর্বে উৎসব উদ্বোধক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, “আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সম্পদ অল্প কয়েকজনের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে। এটা সঠিক নয়। দুর্নীতি হচ্ছে। এরকম হলে আমাদের পরিণতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মত হবে।

“তারা স্বাধীন হয়েছে কিন্তু উপরে উঠতে পারেনি এখনো। তাই মানুষকে জাগাতে হবে। গণসংগীত বিশ্বের শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। গণসংগীত মানুষকে জাগায়। অগ্নিবীণার গান মানুষকে জাগিয়েছিল। একাত্তরের মত আবার জাগতে হবে৷ বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে। সে লড়াইয়ে গণসঙ্গীত অতীতের মত আমাদের পথ দেখাবে।”

উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “যখন সমাজ ভালো থাকে না, দেশ আক্রান্ত হয় অপশক্তির দ্বারা তখন বুক টান টান করে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায় যে সংস্কৃতি তার অন্যতম প্রধান উপকরণ গণসঙ্গীত। এই বাংলাদেশে সকল আন্দোলনে গণসঙ্গীত শক্তি যুগিয়েছে।

“একসময় গণসঙ্গীত শক্তিশালী ধারায় থাকলেও মাঝে কিছুটা বিরতি যেন ছিল। সে প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে আবার পুনর্জাগরণ। সকল দল ও শিল্পীদের আবার যুক্ত করতে জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন শুরু। চট্টগ্রামের পর সকল বিভাগীয় শহরে উৎসবের আয়োজন করতে চাই।”

আবুল ফারাহ পলাশের সঞ্চালনায় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ, সংস্কৃতিজন ও উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী মানজার চৌধুরী সুইট, উৎসবের যুগ্ম সমন্বয়কারী শিল্পী শ্রেয়সী রায় ও চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার।

বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধনের পর সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু।

বিকেলে দলীয় সঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করবে খুলনার বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, আব্দুল লতিফের গান পরিবেশন করবে দিনাজপুরের দল ভৈরবী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান পরিবেশন করবে রাজশাহীর দল জয়বাংলা, বর্ণবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করবে বরগুনার দল মাটিয়াল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান পরিবেশন করবে নোয়াখালীর দল বিশ্বভূবন, ফকির আলমগীরের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, ভূপেন হাজারিকার গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল উঠোন, শ্রেণি-সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের দল সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং অজিত রায়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন।

একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রংপুরের শিল্পী রূপু মজুমদার, ঠাকুরগাঁও এর জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, ঢাকার ফকির সিরাজ, কাজী মিজানুর রহমান, আরি রহমান ও প্রলয় সাহা এবং চট্টগ্রামের ফারহানা রহমান কান্তা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের ওরিয়েন্টাল স্কুল অব ডান্স।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারে ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ।

আলোচনায় অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক।