বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান বা ‘ক্লিন ফিড’ সরবরাহ করে এমন ২৪টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করতে সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা আসার পর বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, স্টার স্পোর্টস, টেন স্পোর্টস, ডয়চে ভেলের মত চ্যানেলগুলো আবার দেখতে পারছেন দর্শকরা।
Published : 05 Oct 2021, 01:12 PM
আইন বাস্তবায়নে সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিজ্ঞাপন দেখায় এমন টেলিভিশনের পাশাপাশি ক্লিন ফিড দেওয়া টেলিভিশনগুলোর সম্প্রচারও গত শুক্রবার থেকে বন্ধ রেখেছিলেন পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা।
কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ বলেন, সোমবার বিকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে ২৪টি বিদেশি টিভি চ্যানেলের তালিকা পাওয়ার পর সেগুলো তারা খুলে দিতে বলেছেন।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালী, ধানমণ্ডি, মিরপুর এলাকায় বিবিসি, সিএনএন, স্টার স্পোর্টস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মত বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে।
তবে সাভারের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনও এসব চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না বলে কয়েকজন দর্শক জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নিজাম উদ্দিন মাসুদ বলেন, “সরকারের নির্দেশনাটা সবার হাতে গিয়ে এখনও পৌঁছেনি। জনবল কম থাকলে এটা অ্যালাইনমেন্ট করতেও অনেকের ৪-৫ ঘণ্টার মত সময় লাগে। আজকের মধ্যে পুরো দেশে চ্যানেলগুলো চালু হয়ে যাবে।”
সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে গত শুক্রবার ৬০টির মত বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা।
এর মধ্যে জি বাংলা, স্টার জলসা, সনি লাইভের মত জনপ্রিয় ভারতীয় চ্যানেল যেমন ছিল, তেমনি বিবিসি, সিএনএনের মত নিউজ চ্যানেল এবং স্টার স্পোর্টস, টেন স্পোর্টসের মত খেলার চ্যানেলও ছিল।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, একযোগে সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করতে গিয়ে ক্লিন ফিড দেয় এমন ১৭টি টিভি চ্যানেলও বন্ধ রেখেছেন পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা; যা কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের পরিপন্থি।
মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির মধ্যে কেবল অপারেটররা বলেছিলেন, সরকারের তরফ থেকে সেই চ্যানেলগুলোর তালিকা পেলে তারা সম্প্রচার করবেন।
পরে ‘ক্লিন ফিড’ সরবরাহ করে এমন ২৪টি টিভি চ্যানেলের তালিকা দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তালিকায় থাকা চ্যানেলগুলো হল- বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, টেন স্পোর্টস, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দুবাই স্পোর্টস, মাস্তি টিভি, বিফরইউ মিউজিক, এমটিভি, স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস-২, স্টার স্পোর্টস ৩, স্টার স্পোর্টস ৪।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, “৩০ সেপ্টেম্বরের পর ক্লিন ফিড ছাড়া কোনো টিভি টিভি চ্যানেল/অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা যাবে না মর্মে সংশ্লিষ্ট সকলকে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো বিদেশি চ্যানেল ক্লিন ফিড থাকা সত্ত্বেও ১ অক্টোবর ২০২১ থেকে সম্প্রচার বন্ধে রেখেছে। যা কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০১৬’-এর পরিপন্থি।”
“উপর্যুক্ত বিদেশি টিভি চ্যানেলসমূহ ও আরো যে সকল অনুমোদিত বিদেশি টিভি চ্যানেল ক্লিন ফিড অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে যে সকল টিভি চ্যানেল বন্ধ না রেখে সম্প্রচার করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
স্টার স্পোর্টস, ডিসকোভারি ‘ক্লিন ফিড’ দেয় না, দাবি অপারেটরদের
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ২৪টি টিভি চ্যানেলের তালিকায় থাকা স্টার স্পোর্টস, ডিককোভারিসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেল বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন কেবল অপারেটর।
২০০৬ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না।
একটি কেবল অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিসকোভারি, এম টিভি, টেন স্পোর্টস-প্রত্যেকটা চ্যানেলে বিজ্ঞাপন চলে। সরকার ‘ক্লিন ফিড’ দিতে বলেছিল, এখন আবার বিজ্ঞাপনসহ টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করতে বলছে।”
বিষয়টি নিয়ে কোয়াবের নেতা এস এম আনোয়ার পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আমাদের তালিকা দিয়েছে আমাদের কাজ হল-সেগুলো চালানো। সেই চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড দেয় কি না দেয় সেটা তো আর আমাদের বিষয় না। ক্লিন ফিড যদি নাও থাকে তাও অন্তত জরিমানা লাগছে না। আমাদের কাছে সেই তালিকাটা আছে।”
অপারেটরদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিভি-২) রুজিনা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেবল অপারেটরা মন্ত্রণালয়ে জানালে বিষয়টি তারা দেখবেন।