রাজধানীর গুলশানের ফু-ওয়াং বৌলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লি. এর বিরুদ্ধে ৪১ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
Published : 08 Sep 2021, 10:27 PM
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল এই রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে তদন্তে উদঘাটিত হওয়ার কথা দাবি করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বুধবার ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌসী মাহবুবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সম্প্রতি ফু-ওয়াং বারের বিষয়ে এই তদন্ত পরিচালনা করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এই বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর এর আওতাধীন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নেমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে এলসি রিপোর্ট ও ভ্যাট সার্কেল অফিস থেকে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়।
“এসব দলিলাদি আড়াআড়ি যাচাই করে এই ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে ফু-ওয়াং বার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “উদঘাটিত ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে ফু-ওয়াং বারকে বক্তব্য প্রদানের জন্য কয়েক দফায় সময় দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেনি।“
প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার এ সংক্রান্ত নোটিস দিলেও চাহিদা মোতাবেক দলিলাদিও দেয়নি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানি বারবার সময় চেয়ে তদন্তে কালক্ষেপণ করে এবং নিজের প্রতিশ্রুত সময়সীমা নিজেই ভঙ্গ করে।
শিগগির পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে মামলাটি ঢাকা উত্তরে ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট রিপোর্টে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে ১৬২ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এরমধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় মূল্য নির্ণয় করা হয় ১৪১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
কিন্তু দাখিলপত্রে বিক্রয় মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ফু-ওয়াং বার বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
বিক্রয় মূল্য কম প্রদর্শন করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা উৎঘাটন করা হয়।
এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা সুদ প্রযোজ্য।
অধিদপ্তর আরও জানায়, তদন্ত অনুযায়ী ওই মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯২২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
অপরদিকে, স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৪৩ লাখ ১১ হাজার টাকা উদঘাটন করা হয়।
এই ফাঁকির ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে ২৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা সুদ প্রযোজ্য।
সবমিলে প্রতিষ্ঠানটির ৪১ কোটি ৮ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।