সুমিস হট কেকের 'ভ্যাট ফাঁকি' ৭ কোটি টাকা, মামলা

পাঁচ বছর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় উত্তরার ‘সুমিস হট কেক’ নামের একটি বেকারিপণ্যের চেইনশপের বিরুদ্ধে সুদসহ সাড়ে ১০ কোটি টাকার মামলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2021, 04:58 PM
Updated : 8 June 2021, 05:07 PM

মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর জানায়, সুমিস হট কেক ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ওপর সুদ বাবদ ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকাসহ মোট ১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা আদায়ে এই মামলা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “সুমিস হট কেক প্রধানত ঘোষণার তথ্যে জালিয়াতি করেছে।

“গত ২ জুন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব এর নেতৃত্বে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল সেখানে এই অভিযান চালিয়ে মেশিনে কেক তৈরির ব্যবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছেন।“

তিনি জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এটি ‘ন্যায় নির্ণয়ের’ জন্য ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের কাছে পাঠানো হবে।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, হাতে তৈরি কেক এর ওপর ভ্যাট নেওয়া হয় ৫ শতাংশ হারে। কেক মেশিনে বানানো হলে এই হার ১৫ শতাংশ।

তবে সুমিস হট কেক মেশিনে কেক তৈরি করলেও হাতে বানানোর ঘোষণা দিয়ে প্রায় পাঁচ বছরে এত বিপুল অর্থের ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ‘সুমিস হট কেক’ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেফটন্যান্ট কর্নেল (অব.) শেখ মো. শাহজালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১২ সালের ভ্যাট আইনের ২০১৬ সালের সম্পূরক শুল্কের তৃতীয় তফশিল ১৯.৫ বিধিমালা অনুযায়ী ১ কেজি ওজনের বেশি কেকের উপর ৫ শতাংশ আর এক কেজির কম ওজনের কেকের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।

“ভ্যাট আইন অনুযায়ী আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়েছি। সরকারের কোষাগারেও একই হারে ভ্যাট জমা দিয়েছি।“

তিনি আরো বলেন, “যে কোনও কেক তৈরি করতে হলে প্রথমে হাতে সকল কাঁচামাল নির্দিষ্ট একটি ছাঁচে গুলিয়ে ওভেনের মাধ্যমে নির্ধারিত তাপমাত্রায় তৈরি করা হয়। এরপর কেকের লেয়ার তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ হাতের মাধ্যমে।

“আর মেশিনের কেক তৈরির নিয়ম হচ্ছে পরিমাণ মতো কাঁচামাল মেশিনের নিদির্ষ্ট কন্টেইনারে ঢালা হয় আর ওই মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাজার হাজার পিছ কেক তৈরি হয়। মূলত মেশিনের মাধ্যমে ছোট কেক তৈরি করা হয়।”

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল বলেন, “আমরা ব্যবসায়িকভাবে কেক তৈরি করি বলে, বেশি লোকবল ও বেশি ছাঁচ দিয়ে বেশি পরিমাণে কেক তৈরি করি। এটা কোনোভাবেই মেশিনের সঙ্গে তুলনীয় নয়।”

তার দাবি তারা এই ব্যবসার প্রথম থেকেই আইন অনুযায়ী ৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেই ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পরিদর্শক তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।

“যদি আমরা কোনো আইন লঙ্ঘন বা ফাঁকি দিয়ে থাকি, তখন থেকে কেন বলা হয়নি? যে কর আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে নেইনি, সেই বিপুল পরিমাণ কর এখন আমাদের উপর চাপানো হলে আমরা কিভাবে দেব- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সরেজমিন পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানের কারখানায় স্থাপন করা ছয়টি কেক মিক্সিং মেশিনসহ অটো ওভেন, বিস্কুট তৈরির বড় অটো ওভেন ও ক্রিম মিক্সিং মেশিন পাওয়া গেছে।

গোয়েন্দা দল আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানের কারখানায় কেক প্রস্তুতের জন্য কিছু কাজ হাতে (বস্তা থেকে ময়দাসহ অন্যান্য উপকরণ মিক্সিং মেশিনে ঢেলে দেয়া, কেক এর বেটার মিক্সিং মেশিন থেকে নামানো, ক্রিম দিয়ে ডিজাইন ইত্যাদি) করা হলেও কেক প্রস্তুতের মূল কাজ মেশিনে হয়ে থাকে।