ঈদের দিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়েছিলেন ১৩ হাজার দর্শনার্থী; ঈদের পরদিন তা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
Published : 23 Apr 2023, 08:06 PM
ঈদের পরদিন চট্টগ্রাম নগরীর সবগুলো বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় আগের দিনের সমাগমকে ছাড়িয়ে গেছে।
শনিবার ঈদের দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। তবে রোববার সকাল থেকে নগরীর নানা প্রান্তের সব বিনোদন কেন্দ্রে কানায় কানায় ভরে ওঠে।
বেড়াতে আসা অনেকেই বললেন, ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ায় বাইরে বের হওয়া হয়নি। তাই ঈদের আনন্দ যেন পুরোপুরি হয়, সেজন্য ঘুরতে বেড়িয়েছেন বন্ধুদের নিয়ে।
এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল বিচ, ফয়’স লেক, চিড়িয়াখানা, সিআরবি, হালিশহর সমুদ্র সৈকত, শিশু পার্কের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর পাড়ের বিভিন্ন স্থানে মানুষের আনাগোনাও বাড়ে। বিভিন্ন পার্কে সমাগম ঘটে সব বয়সী মানুষের।
শহরের উন্মুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতই সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয়। যে কোনো উৎসবে তাই মানুষের প্রথম পছন্দ এই সৈকত।
রোববার পতেঙ্গা সৈকতে হাজারো মানুষের মিলন মেলা ঘটে। দর্শনার্থীরা মাতেন সমুদ্রস্নানে। অনেকে স্পিডবোটে চড়েন; কেউ ঘোড়ার পিঠে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে সৈকতে এই উৎসব।
এদিকে বিকাল ৫টার দিকে বেড়াতে আসা মানুষের যানবাহনের চাপে সৈকত সংলগ্ন সড়কে যানজট বাঁধে। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের লাইন দেখা যায় দীর্ঘ পথে।
নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সৈকতে বেড়াতে আসা আসিফুল হক বললেন, “ঈদের দিন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গেছি। তাই আজ বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এলাম। এখানে হাজার হাজার মানুষ। রীতিমিত মেলা বসে গেছে।”
সৈকতের পাশাপাশি এর লাগোয়া সড়কেও দেখা গেল ভিড়। অনেকেই সৈকতে প্রবেশ না করে সড়কের পাশে সমুদ্রের তীরে বসে গল্প-আড্ডায় মেতেছেন।
ঈদের আনন্দ নির্বিঘ্ন করতে সমুদ্র সৈকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পতেঙ্গা থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন আছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। সৈকতে সব রকমের টহল আছে, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
“যানবাহন চলাচলে নিয়ম না মানলে বা কেউ আইন ভঙ্গ করলে নিয়মানুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে নগরীর ফয়’স লেক এলাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ঈদের দিনের সমাগমকে ছাড়িয়ে গেছে রোববারের দর্শনার্থীর সংখ্যা।
এদিন সকাল থেকে চিড়িয়াখানার মূল ফটকে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বেলা ২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারে মত। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পরের সাড়ে তিন ঘণ্টায় আরও ১১ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ফলে শনিবারের ১৩ হাজার দর্শনার্থী ছাড়িয়ে রোববার তা ১৬ হাজারে ওঠে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ বলেন, ঈদের পাঁচ দিনে বৃষ্টি না হলে ৭০ হাজার লোক সমগাম হবার সম্ভাবনা আছে।
“এবার নতুন আনা ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙ্গারু, লামা, ম্যাকাও, এক জোড়া সিংহ দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে। এসব প্রাণী আনার পর এটাই প্রথম ঈদ। এছাড়া বাঘের নতুন খাঁচা করা হয়েছে। আমাদের পাঁচটা সাদা বাঘ আছে। যা শিশুদের প্রধান আকর্ষণ।”
সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নগরীর নাসিরাবাদ এলাকা থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন সায়েদুল আরেফিন।
তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েরা পশু-পাখি দেখতে পছন্দ করে। তাই ওদের নিয়ে এসেছি। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিতে হয়েছে। ক্যাঙ্গারু আর বাঘ দেখে বাচ্চারা খুব খুশি।”
ফয়’স লেক এলাকার কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নগরীর বাসিন্দাদের অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য। গরমে প্রাকৃতিক পরিবেশে লেকে ঘুরে ও পানিতে ঝাপিয়ে সময় কাটছে ভ্রমণ পিপাসুদের।
ডিজে মিউজিকের তালে তালে সি ওর্য়াল্ডের ওয়েভ পুল ডান্সিং জোন নাচে-গানে মুখরিত।
পার্কটির পরিচালনাকারী সংস্থা কনকর্ডের উপব্যবস্থাপক (বিপনন) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “সকাল থেকেই ওয়াটার পার্কে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের আগমনের হার বেশি।
“আমাদের সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আগত দর্শনার্থীরা কেউ যেন কারও আনন্দে ব্যাঘাত না ঘটায়। সকলেই স্বাধীনভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সকলকে সহযোগিতা করবেন আশা করি।”
নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে জোড় দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিকালের সময়টাতে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে পারিবার নিয়ে বেশি লোকের আগমন ঘটে। এসময় প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে মানুষ লেকে নৌভ্রমণ বেছে নেন।”
চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা লতিফুর রহমান বলেন, “বছরে দুয়েকবার ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে আসা হয়। ছেলেমেয়েরা এখানে পানিতে খুব আনন্দ করে। তাই ঈদ উপলক্ষে আজ এলাম।”
এছাড়া নগরীর বায়েজিদ লিংক রোড, সিআরবি, সদরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, ব্রিজঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়েও এদিন বিপুল জনসমাগম ঘটেছে।