করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দরজাও বন্ধ ছিল পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতরে।
Published : 26 Jul 2020, 07:35 PM
ক’দিন বাদেই ঈদুল আজহা। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় এবারও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে এসব বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এরপর এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ, মে মাসে ঈদুল ফিতর গেছে। ১ অগাস্ট পালিত হবে ঈদুল আজহা।
টানা ‘সাধারণ ছুটির’ পর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সীমিত আকারে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলার কোনো আভাস মেলেনি।
বছরের এই তিন বড় উৎসবেই কোনো আয় করতে না পেরে ক্ষতির মুখে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো পরিচালনাকারীরা। সারা বছর এই তিন উৎসবের অপেক্ষায় থাকে বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনাকারীরা। আর নগর জীবনে ব্যস্ত মানুষও একটু স্বস্তির খোঁজে ছোটে সেখানে।
এ অবস্থায় বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হলেও যদি বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয়, তাতে ক্ষতি কিছুটা কমবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব এমিউজমেন্ট পার্ক অ্যান্ড অ্যাট্রাকশন্স-বাপা বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক উন্মুক্ত করে দেয়ার অনুমতি চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করেছে গত ৩০ জুন।
এর জবাবে ২২ জুলাই পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শ্যামলী নবী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, “করোনাকালে বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এই মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়নি তাই উন্মুক্ত করে দেয়ার অনুমতি দেয়া তাদের এখতিয়ারাধীন নয়।”
ওই চিঠিতে বলা হয়, “বর্তমানে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা সরকারি নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে জেলা প্রশাসন বিনোদন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।”
তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক নিজেই। মহামারীর কারণে চিড়িয়াখানার আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তিনিই জানিয়েছেন।
“মাসে ১৫ লাখ টাকা পশু-পাখির খাবার, কর্মচারীদের বেতন ও পরিচালনা বাবদ খরচ হয়। সেই ১৯ মার্চ থেকে এক টাকাও আয় নেই। কিন্তু সব খরচ চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এখনও চিড়িয়াখানা দর্শনাথীদের জন্য বন্ধ রেখেছি।”
চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হওয়া চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, “করোনার মধ্যে পশুপাখির সংখ্যা বেড়েছে। দুই ঈদে প্রায় ৮০-৯০ লাখ টাকার টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কোনো আয় হয়নি।
“সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধির প্রকল্পটির কাজ মাঝপথে আটকে আছে। নিজস্ব আয়ে চলায় এখন সঞ্চয়ে টান পড়েছে। আর বড় জোর দু-তিন মাস এভাবে টানা যাবে।”
“চার মাসের বেশি সময় ধরে পার্ক, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, রিসোর্টসহ সবকিছু বন্ধ। কিন্তু বেতন-বোনাস সবই পরিশোধ করা হচ্ছে। বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতির মেনটেইনেন্স খরচও বাড়ছে।”
বছরের স্বাভাবিক সময়ে এখানে দিনে গড়ে এক হাজার দর্শনার্থী আসলেও ঈদে তা বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ দৈনিক ছয় হাজার পর্যন্ত।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “রোজার ঈদের ৮-১০ দিনে আয় হয় দুই কোটি থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা। কোরবানির ঈদের ৮-১০ দিনে টিকেট বিক্রি হয় দুই কোটি টাকার কাছাকাছি। এবার রমজানের ঈদেও পার্ক বন্ধ ছিল। কোনো আয়ই হয়নি।
“অনেকেই ফোন করে জানতে চান পার্ক খোলা কিনা। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। তারা বেড়াতে আসতে চান। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে চাইলে যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন যেমন পার্কের ভিতরের রেস্টুরেন্ট বা অন্য কিছু যা প্রয়োজনীয় সেগুলো বন্ধ রেখেই পার্ক খোলা যায়।”
“সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী হয় পহেলা বৈশাখে, রোজার ঈদের সাতদিন এবং কোরবানির ঈদে। এপ্রিল মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। এই ঈদেও খোলার অনুমতি পাইনি। এটা লিজের শেষ বছর। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা জানি না।”
কাজীর দেউড়ি এলাকার চট্টগ্রাম শিশু পার্ক পরিচালনাকারী ওয়ান্ডার ল্যান্ডের জিএম মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “পড়ে থেকে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এই সেক্টর ছাড়া সবই তো খোলা। আমরাও চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জীবন ও জীবিকা যেন সমানতালে চলে। আমাদের জীবিকা থমকে গেছে।”