প্রতিবছর ঈদের দিনটি আসে আনন্দ নিয়ে, সেই আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা শহরে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়।
কিন্তু এবার ঈদে সব অন্যরকম; চোখে না দেখা এক ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রা, মানুষকে করে রেখেছে প্রায় গৃহবন্দি।
ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলিতে আনন্দ ভাগাভাগি নেই, দল বেঁধে বেড়ানো নেই, আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাওয়া আর আড্ডা দেওয়া নেই। এমন একটি ঈদে আসবে, কখনও ভাবতে পারেনি কেউ।
অন্যবছর ঈদের দিন এসব বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ভিড়ে হাঁটাই দায় হয়; এবার সেখানে সুনসান নীরবতা।
সোমবার দুপুরে পতেঙ্গায় গিয়ে দেখা গেল, অপরূপ সৈকত পড়ে আছে নিঃসঙ্গ একা। পতেঙ্গা সৈকতের এমন রূপ সচরাচর দেখা যায় না।
“এবারের চিত্র তার উল্টো। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মানুষ যেন সৈকতে ভিড় করতে না পারে, এবার আমরা নজর দিচ্ছি সেদিকে।”
ঈদের দিন পতেঙ্গা থানার এসআই সুমন দের ডিউটি পড়েছে কাঠগড় মোড়ের পুলিশ চেকপোস্টে।
তিনি জানালেন, সকাল থেকে অনেকে সৈকতে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফয়’স লেক ও সী ওয়ার্ল্ডের অবস্থাও একই রকম।
সী ওয়ার্ল্ডের টিকিট কাউন্টারগুলোতে ঈদে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন থাকে। এবার দেখা গেল কাউন্টারে ধুলো জমে গেছে মাস তিনেক ধরে বন্ধ থাকার কারণে।
প্রতি ঈদে দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগমে মুখরিত থাকে ফয়’স লেক। এবার সেখানে কেবল পাখির কলকাকলি।
চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হয় ফয়’স লেক ও সী ওয়ার্ল্ডে। টিকেটের জন্য গুণতে হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
বিশ্বজিৎ জানান, এমনিতে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২ শ দর্শনার্থী আসতেন ফয়’স লেক ও সী ওয়ার্ল্ডে। আর ঈদের ছুটির মধ্যে দৈনিক সাড়ে চার থেকে ছয় হাজার দর্শনার্থী সামলাতে হত তাদের। এছাড়া রিসোর্টগুলোতেও অতিথিরা থাকে।
ফয়’স লেকের প্রবেশমুখেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছরে এ চিড়িয়াখানাকে দর্শনীয় করে তোলার চেষ্টা করে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পাখি, বাঘ, সিংহ, জেব্রা আর হরিণ আছে এখানে। তবে আপাতত কোনো দর্শনার্থী নেই।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিনে সাধারণত চার থেকে পাঁচ হাজার লোক সমাগম হলেও ঈদের সময়ে দর্শনার্থী আসে ১৭ থেকে ১৮ হাজার। উৎসবের এ সময়ই চিড়িয়াখানার আয় হয় সবচেয়ে বেশি।
“গত ১৯ মার্চ থেকে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের আসা নিষেধ। এমন ঈদও আমাদের আর আসেনি।”
কর্ণফুলী নদীর তীর, পারকি বিচ, কাট্টলী সৈকত, সিআরবি, ওয়ার সিমেট্রিতেও ভিড় লেগে থাকত ঈদের ছুটিতে। এবার সব জায়গাই ফাঁকা।
মাদারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ জানান, প্রতিবছর ঈদের দিন তার বাসায় বন্ধুরা আসত। আর বেড়ানো হত ঈদের পরদিন।
“এবার তো কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। আজ ঈদের দিন গেল, বন্ধুরাও কেউ আসতে পারল না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদের বিকালে আত্মীয়-বন্ধুরা মিলে তারা বেড়াতে বের হতেন। কিন্তু এবার তা হয়নি।
“এবার আমরা সবাই বাসায়। এই মহামারীর শেষ হোক, আবার সব আগের মত হোক, এই আশা নিয়েই আছি।”