বন্দর নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের নামফলক পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
Published : 11 Mar 2019, 05:44 PM
‘রাতের অন্ধকারে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পুরনো মোড়ের নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে’ অভিযোগ জানিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে চট্টেশ্বরী সড়কের ওই সব মোড়ে পুনরায় নামফলক বসানোর দাবি করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “১৩ মার্চের মধ্যে চট্টেশ্বরী সড়কের নামফলকগুলো যথাস্থানে প্রতিস্থাপিত না হলে পরদিন থেকে দেশজুড়ে পক্ষকালব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান কর্মসূচি পালন করা হবে।”
এই এলাকার চট্টেশ্বরী মন্দির ৫০০ বছরের পুরনো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে কাজীর দেউড়ি মোড়- ব্যাটারি গলি- মেহেদিবাগ মোড়- জেমস ফিনলে-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেল হয়ে চকবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কটি চট্টেশ্বরী সড়ক নামে খ্যাত।
“কাজীর দেউড়ি মোড়ে, আলমাস সিনেমা হলের মোড়ে, মেহেদীবাগ মোড়ে, জেমস ফিনলে, মেডিকেল হোস্টেলের সামনে ও চকবাজার মোড়ে ছয়টি নামফলক ছিল। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ইতোমধ্যে সেগুলো উৎপাটন করে ফেলেছে।”
এই ঘটনায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের টেলিফোনে আলাপ হয়েছে বলে জানান রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, ৩ মার্চ টেলিফোনে বিস্তারিত আলাপে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র তাদের বক্তব্য শুনেছেন।
“আলাপের শেষ পর্যায়ে তিনি (মেয়র) বলেছিলেন- আমাকে সাত থেকে দশ দিনের সময় দেন। আমি চট্টেশ্বরী সড়কের নামফলকগুলো যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করবো।”
চট্টেশ্বরী সড়কের নামের পরিবর্তনে এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ নেওয়া না হলও এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বলে জানান রানা দাশগুপ্ত।
নামফলক পুনরায় বসানোর বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোনো ঘোষণা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ ঘোষণা উদ্বেগকূল জনগণকে অনেক বেশি আশ্বস্ত করতে পারতো যদি এতে উপড়ে ফেলা নামফলকগুলো প্রতিস্থাপনের ঘোষণা থাকতো।”
চট্টেশ্বরী সড়কের নাম পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও।
যদিও এর আগে কাজীর দেউড়ি মোড়ে সার্কিট হাউজ সংলগ্ন সড়কদ্বীপে ‘জে আই মাদ্রাসা’ সড়ক নামের একটি নামফলক লাগানো হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে চট্টেশ্বরী সড়কের মেহেদীবাগ মোড়ে জহুর-মান্নান চত্বর স্থাপন করা হয়।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা জহুর-মান্নান চত্বরের বিরোধী নই। মুক্তিযুদ্ধে জহুর আহাম্মদ চৌধুরী ও এম এ মান্নানের অবদান আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করি।
“আমরা চাই চট্টেশ্বরী সড়কের নামফলক আগে যেভাবে ছিল সেভাবে লাগানো হোক।”
অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, “জেমস ফিনলের সামনে নামফলকের দুটি ভাঙা পিলার পড়ে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা হবে তা জানতাম না।
“১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাংলাদেশে বহু এলাকার নাম পরিবর্তন করেছে। তখনো এ সড়কের নাম পরিবর্তন করেনি। আমরা চাই না, দেশ পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করুক।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই সড়কের নাম মুছে ফেলার কাজ গত চার দশক ধরে ধীরে ধীরে হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
“চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চট্টেশ্বরী মন্দির অতীত গৌরব নিয়ে আজো দাঁড়িয়ে। এ ঘটনায় শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয় ইতিহাস সচেতন প্রত্যেক মানুষ ব্যথিত হয়েছেন।”
সম্প্রতি চট্টেশ্বরী সড়কের মেহেদীবাগ মোড় থেকে জেমস ফিনলে হয়ে চকবাজার মোড় পর্যন্ত অংশ প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ইনামুল হক দানুর নামে নামকরণ করা হবে এমন একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকনের প্রতিনিধি শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী, সনাতন মৈত্রী সংঘ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সুমন শর্মা, সনাতনের পক্ষে অশোক চক্রবর্তী, চট্টেশ্বরী কালী বাড়ির সেবায়েত পণ্ডিত বিজয় চক্রবর্তী, চিত্রনায়ক পংকজ বৈদ্য সুজন, চকবাজার শিব মন্দিরের বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, মতিলাল দেওয়ানজী, জহরলাল চক্রবর্তী, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দাশ রানা প্রমুখ।